সাবেক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্রর দাপটে জামাই বিশ্ব প্রদীপের সম্পদের পাহাড়

খাগড়াছড়ির সীমান্ত শহর রামগড় জনপদে এক ভয়ংকর নাম ছিল বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী ত্রিপুরা। সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ভাগিনীর জামাই হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে সর্বত্রই তার ছিল ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজি ও দূর্নীতির থাবা।আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে তার নির্যাতন, নিপীড়ন ও দখলবাজিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়। নিজের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য শত বছরের মন্দিরের জায়গা দখল করেছেন।কাজ না করে কালী বাড়ী মন্দিরের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করেছেন। অন্যের জমি দখল করে অন্তত ৫শত একর পাহাড়-টিলায় গড়ে তুলেছেন বাগান-বাগিচা। সে বাগানে সরকারী অর্থে বিদ্যুতের লাইন, পানি সরবরাহের জন্য প্রকল্প ।শশুরের ক্ষমতার দাপটে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প কাজ না করে বিল উত্তোলন ও প্রতিবাদীদের নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে বিরোধী দলের পাশাপাশি ও নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও এলাকা ছাড়া করেছেন। তিনি এখন ভূ-সম্পত্তিসহ প্রায় ৩শত কোটি টাকার মালিক।খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্ত শহর রামগড় উপজেলার জগন্নাথ পাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক দুইবারে বিনা ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কার্বারী ত্রিপুরার রয়েছে আন্ডারগ্রাউণ্ডসহ বিলাস বহুল বাড়ী। তিনি পলাতক সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ভাতিজি’র জামাতা।স্থানীয় মৃনাল কান্তি শীলের অভিযোগ বিশ্ব প্রদীপ ত্রিপুরা তার বাড়ীতে যওয়ার জন্য রাস্তা করতে গিয়ে তার ও ১২৭ বছর আগে ১৯০২ সালে স্থাপিত শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের মন্দিরের জায়গা দখল করেছে। একইভাবে গীতারানী দেবীর জায়গাও দখল করেছেন।তবে কোন ক্ষতিপুরণও দেয়নি। এযেন সূর্যের চেয়ে বালুর তাপ বেশি। আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বপ্রদীপ কুমার ত্রিপুরার সাড়ে ১৫ বছরে নানা অপকর্মের প্রতিবাদ এত করতে না পারলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সাধারণ মানুষ এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে। তবে আবার শেখ হাসিনা দেশে ঢুকে পড়ে কিনা এ ভয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের চোখে-মুখে আতংক দেখা গেছে। তারা যেন ভাসুরের নাম নিতে ভয় পায়।শ্রী শ্রী দক্ষিণেশ্বরী রামগড় কালী মন্দিরটি আজ থেকে ১০৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে মন্দিরের বরাদ্দও আত্মসাত করেছেন বিশ্বপ্রদীপ কার্বারী ত্রিপুরা। শ্রী শ্রী দক্ষিণেশ্বরী রামগড় কালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভাশিষ দাসের অভিযোগ, মন্দিরের উন্নয়নে ২০১৯-২০২০ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রায় ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। বিশ্ব প্রদীপ কার্বারী ত্রিপুরা একাধারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও কালীবাড়ী উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার ছিলেন। তিনি কাজ না পুরো টাকা আত্মসাত করেছেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বপ্রদীপ কুমার কার্বারী ত্রিপুরার বাবা ছিলে সাবেক পুলিশ সদস্য। এক সময় সে রামগড়ে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াতেন। পরে নাম লেখান যুবলীগে। সীমিত আয়ের সংসারের চাকা ঘোরানো ছিল কষ্টকর। বিশ্ব প্রদীপের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা দেখে নজরে পড়ে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার।রাতারাতি হয়ে যান রামগড় উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। এরপর বিয়ে করে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ভাতিজিকে। এরপর তাকে আর পিছনের ফিরে তাকতে হয়নি। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে অর্থবিত্তে পুরো খাগড়াছড়িতে যুবরাজ হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে সীমান্তে মাদক ব্যবসা, ক্যাসিনো আদলের শিলং জুয়া পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ব প্রদীপের রয়েছে চিনছড়ি পাড়া, তৈচালা পাড়া, পাতাছড়া ও খাগড়াবিল এলাকায় প্রায় পাঁচশত একর বাগান-বাগিচা। এসবে শশুর সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রভাব খাটিয়ে সরকারী অর্থে বাগানে প্রকল্প, সোলার প্যানেল স্থাপন, রাস্তা, বৈদ্যুতিক লাইন ও পানি প্রকল্প নিয়েছেন।খোদ রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো: নুরুল আলমের অভিযোগ, বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী একাধারে ছিলেন রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান।তার ছিল বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। তিনি কখনও গোপন বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে, কখনও উপজেলা চেয়ারম্যান পদের দাপট খাটিয়ে চাঁদা হাতিয়ে নিতেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অন্যের জমি জোর জবর-দখল, ব্যবসা বাণিজ্য ছিনিয়ে নেওয়াসহ সব ধরনের অপরাধ অপকর্মে জড়িত ছিল তার বাহিনী। আওয়ামীলীগ বা প্রশাসন সবই ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।তার আঙ্গুলী হেলনেই চলতো রামগড়ের শাসন-শোষণ। আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠনগুলোর নামেও গুপ্ত চাঁদাবাজি , টেন্ডারবাজি, জবর দখল সবকিছুই চলতো। আর এই সবের নেপথ্য শক্তি হচ্ছে তিনি সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ভাতিজি জামাই।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংগ্রহের জন্য এ প্রতিবেদক রামগড় অবস্থানের সময় থেকে অভিযুক্ত বিশ্ব প্রদীপ কার্বারী ত্রিপুরা অজ্ঞাত স্থান থেকে এই প্রতিবেদককে তিনবার কল দিয়েছেন। তার বক্তব্য, তিনি কোন অনিয়মন করেননি। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাণ্বিত হয়ে তার দলের লোকেরাই বিগত দিন থেকে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছেন।তিনি বলেন, পাহাড়িদের সরকারকে আয়কর দিতে হয় না। তাই আয়কর ফাইলে সম্পত্তি বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে সম্পত্তি বাড়লেও কোন সমস্যা না হয়। বিশ্ব প্রদীপ কার্বারী ত্রিপুরার দাবী, বিগত সময়ে তিনি বিএনপি বা তার দলের কোন নেতাকর্মীর উপর নিপীড়ন নির্যাতন চালাননি। বরং সুবিধা দিয়েছেন। এ কারণে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এখনো তার সাথে যোগাযোগ রাখছেন।
ঘটনাপ্রবাহ: আত্মসাত, কুজেন্দ্র, খাগড়াছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন