সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিনের নির্বাসন জীবনের ৮ বছর, দ্রুত দেশে ফিরতে চান

fec-image

কক্সবাজার-১(চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী জননেতা সালাহ উদ্দিন আহমদের নির্বাসন জীবন

গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ মে) দীর্ঘ ৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। তিনি নির্বাসন জীবন থেকে দ্রুত দেশের মাটিতে ফিরতে খুবই উদগ্রীব বলে জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ ‘আত্মগোপন’ থাকা অবস্থায় রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী’ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ ৬২ দিন গুম থাকার পর ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং শহরের গলফ কোর্স মাঠের পাশে অসুস্থ অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় তিনি পুলিশের হেল্প লাইনে ফোন করলে পুলিশ প্রথমে তাকে থানায় ও পরে মিমহামস নামের একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তৎসময়ে ১২ মে বাংলাদেশে বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে সেখান থেকে সিভিল হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সিভিল হসপিটালে সপ্তাহখানেক রাখার পর তার অবস্থার অবনতি হলে ভারতের শিলং-এর বিশেষায়িত হাসপাতাল নিগ্রিমসে ভর্তি করা তাকে। সুস্থ হওয়ার পর জামিন পেলে শিলং শহরের বিষ্ণপুর সানরাইজ গেষ্ট হাউজে অবস্থান করে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। দীর্ঘ ৪ বছর আইনি লড়াইয়ের পর বেকসুর খালাস পান তিনি।

২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হলেও কয়েকদফা সময় পিছিয়ে ওই বছরের ২৬ অক্টোবর আদালতের রায়ে অনুপ্রবেশের দায়ে করা মামলায় নির্দোষ হিসেবে রায় পান তিনি। এ রায়ের ৫ মাস পর মেঘালয়ের সরকার পক্ষে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়।

এ আপিলের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর আইনী লড়াই শেষে আবারো খালাস পান তিনি। এবার দেশে ফিরতে আর কোন আইনী বাধা থাকলো না। অনুপ্রবেশে’র মিথ্যা অভিযোগে ভারতে নির্বাসনে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের দেশে ফিরতে বাধা নেই।

ভারতের শিলং জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকেও সম্প্রতি খালাস পেলেন সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ। শিলং দায়রা জজ আদালতের বিচারক শ্রী আইসরমন রিমবই এ রায় দেন।সালাহ উদ্দিন আহমদের প্রেস সচিব ছফওয়ানুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, সালাহউদ্দিন আহমদ ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘ ৫ বছর দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৯৬ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর টানা ৩ বার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বধীন সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। এসময় তিনি পেকুয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠাসহ কক্সবাজার জেলায় কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেন। পরে ওয়ান ইলাভেনের সময় তিনি কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী এডভোকেট হাসিনা আহমদ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সালাহউদ্দিন আহমদ গুম হবার সময় বিএপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ভারতের শিলংয়ে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

এদিকে, বিএনপির শীর্ষ এ নেতা দেশে ফেরার কথা শুনে চকরিয়া-পেকুয়া তথা জেলাজুড়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্বেগ ও আনন্দের উচ্ছ্বাস বইছে। নেতাকর্মীরা রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা ধরণের স্ট্যাটাস দিয়ে কৃতজ্ঞতাও জানাচ্ছেন।

সালাহ উদ্দিন আহমদের প্রেস সচিব ছফওয়ানুল করিম জানান, ভারতের শিলং জেলা দায়রা জজ আদালত থেকে সম্প্রতি সময়ে বেকসুর খালাস পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি যতদ্রুত সম্ভব দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জীবন:, দেশ, নির্বাসন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন