সাভারে রানা প্লাজার উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত : নিহত ১১২৭

ডেস্ক নিউজ:  
অবশেষে সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো সাভারের ধসে পড়া ভবন রানা প্রাজার উদ্ধার কাজ। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হল বাংলাদেশের এক বেদনাবিধুর অধ্যায়ের। গত ২৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে আটটার দিকে সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১২৭।

সোমবার রাত সাড়ে নয়টায় উদ্ধার পরিচালনাকারী দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।  সমাপ্তির এ ঘোষণা শুনেই কান্নাকাটি শুরু করেন সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অপেক্ষমাণ স্বজনেরা । যাদের অনেকেই খুঁজে পাননি তার প্রিয় স্বজনের লাশ।

দেশের শিল্পের সবচাইতে বড় বিপর্যয়কর ও প্রাণহানির এ ঘটনার অভিযান শেষ হল ২০ দিনে। মঙ্গলবার ভোর ছয়টায় ধ্বংসস্তূপ এলাকার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে।

সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশন সদর দপ্তরের কর্নেল ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, রবিবার বিকালের পর থেকে জীবিত বা  মৃত আর কাউকে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আর কোনো মৃতদেহ নেই। তাই মঙ্গলবার ভোর ছয়টার মধ্যে ভবনটি জেলা  প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যমতে, ধসে পড়া ভবন থেকে জীবিত ও মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৩৫৫৩ জনকে। এর মধ্যে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় ১১১৫ টি। জীবিত উদ্ধারের পর হাসপাতালে মারা যান ১২ জন। সব মিলিয়ে রানা প্লাজা ধসে মৃতের সংখ্যা ১১২৭।

সোমবার বিকাল পর্যন্ত মাঠ ও হাসপাতাল থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৭৮১টি মৃতদেহ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে হস্তান্তর করা হয়েছে ৫৩টি মৃতদেহ। হস্তান্তরের অপেক্ষায় মর্গে মৃতদেহ আছে ৫৯টি। আজ অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কোনো মৃতদেহ ছিল না।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রানা প্লাজা নিহতদের আত্মার শান্তির ও আহতদের আরোগ্য কামনা করে সাভারে ধংসস্তূপ এলাকায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

সব সময় আল্লারে ডাকছি: রেশমা

ধ্বংসস্তূপের নিচে দীর্ঘ ১৭ দিন আটকে থাকার পর জীবনে ফেরা রেশমা বেগম বলেছেন, “আমি কখনো কল্পনাও করিনি বেরোতে পারব। সব সময় আল্লারে ডাকছি।”

সোমবার বিকেলে সাভার সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিজের বেঁচে থাকার কথা জানাতে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয় তাকে। নিজের মুখে তিনি তার সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার অলৌকিক কাহিনী বর্ণনা করেন।

নিজে থেকে দুঃসহ ১৭ দিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি। এসময় তার পাশে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেশমা বলেন, “ফাটলের কথা বলার পরে মালিক আমাদের বলেছিল এটা কিছু না, তোমরা কাজ কর। যখন ভবন ধসে পড়ে তখন আমি মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখি আমি মেঝেতে পড়ে আছি। এরপর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু জায়গা কম থাকায় দাঁড়াতে পারি না।”

রেশমা বলেন, “এরপর হামাগু‍ড়ি দিয়ে এগিয়ে অন্য দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে হাতের কাছে একটি লোহার রড পাই। সেটা দিয়ে ধসে পড়া স্তূপ সরিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে একটি গর্তের মতো জায়গায় পড়ে যাই, সেটা ছিল একটি কাপড়ের দোকান।”

তিনি বলেন, “গড়িয়ে চলার সময় আমার পোশাক ছিঁড়ে যায়। উদ্ধারের দিন আমি একটু আলো দেখতে পাই। সেই আলো দেখে চিৎকার করি, আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচান। উদ্ধারকারীরা আমাকে একটি টর্চ দেন। সেটা দিয়ে আমি একটি জামা বের করি। সেটা পরে নেই।”

রেশমা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমার আশেপাশে আরও কয়েকজন লোক ছিল। পরবর্তীতে যারা সবাই মারা যান। একটি ছেলে আমার কাছে পানি চেয়েছিল এবং বলেছিল আমাকে বাঁচান, অথচ আমি কিছুই করতে পারিনি।”

১৭ দিন যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রেশমা বলেন, “সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তা না হলে বেঁচে থাকতে পারতাম না। ১৭ দিন শুধু পানি খেয়েই বেঁচে ছিলাম। অন্য কোনো খাবার পাইনি। তবে কয়েকটি বিস্কুট খেয়েছি।”

সাভারে ভবন ধ্বসের নিখোঁজদের তালিকা দাখিলে হাইকোর্টের নির্দেশ

সাভারে ভবন ধ্বসের ঘটনায় নিখোঁজদের তালিকা এক সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে রানা প্লাজার অনুমোদন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে সাভারের পৌর মেয়রকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ২১ মে নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন, ড. কামাল হোসেন, ড. ইউনুস আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম।
ঢাকা জেলা প্রশাসক ও প্রধান কারাখানা পরিদর্শককে নিখোঁজের স্বজনদের ছবি ও পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে এ তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন