parbattanews

সাড়ে ৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ১৩টি ব্রিজ নির্মাণে চলছে ব্যাপক অনিয়ম

IMG_5569

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি:

চট্রগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের ১৩টি ব্রিজ নির্মাণ কাজ চলছে দায়সারাভাবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাড়ে ৪৫ কোটি টাকার এ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে দেদারসে ব্যবহার হচ্ছে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ঠিকাদার এসব অনিয়মের মাধ্যমেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দেদারসে!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্যাকেজ ১১, ১২ এর আওতায় সাড়ে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্রগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের এক সময়ের “মরণফাঁদ বেইলী ব্রীজ” নাজিরহাট কুম্বারপাড়া, ফটিকছড়ির পোলাগাজীর পাড়, তাজুরঘাডা, আমতলী, রাবার বাগান, নয়াবাজার মানিকছড়ির গাড়ীটানা, বড়ইতলীর লেমুয়া ব্রীজ, গোদারপাড়, গচ্ছাবিল-১, গচ্ছাবিল-২, গুইমারার কালাপানি ও ব্যাঙ্গমারাসহ ১৩টি ব্রিজ নিমার্ণ কাজ প্রাপ্ত হয় মো. আনোয়ার হোসেন(এফ.ই.এস.এল) জে.বি নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখ্য যে, গত ৬ই আগষ্ট একযোগে এসব সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্ভোধন করে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কার্যাদেশ পাওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি নিয়মের তোয়াক্কা না করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ইতোমধ্যে ৩টি ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে! ৫-১০-১৫-২০ এম এম সাইজের পাথরের স্থলে শুধুমাত্র ২৫ এম এম পাথর, সিলেট সেন্ট এর পরিবর্তে স্থানীয় অপরিষ্কার বালু ব্যবহার করছে তাঁরা। কাজের ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে ১-২-৪ এর স্থলে ১-১২-১৩ মিশ্রণে এবং ৬০ এম.এম রডের স্থলে ব্যবহার হচ্ছে নিন্মমানের রড!

এদিকে জনগুরুত্বপূর্ণ চট্রগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের ব্রিজ নির্মাণ কাজে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় জনগন। তারা জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চলছে ব্রিজ নির্মাণ কাজ। যথাযথ তদারকির মাধ্যমে ব্রিজগুলোর নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের। উক্ত সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইম.ই.আজাদ চৌধুরী বাবুল আক্ষেপ করে বলেন, এ সড়কের বেইলী ব্রিজগুলো ছিল মরণফাঁদ! ফলে বর্তমান সরকার এ জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেন, কিন্তু এমন নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে কাজ হবে তা আমরা কেউ ভাবিনি। দ্রুত অনিয়ম দূর করে মানসম্মতভাবে কাজ আমরা প্রত্যাশা করছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজে সংশ্লিষ্ট একাধিক অভিজ্ঞ ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের ইচ্ছামতো কাজ করছে, কেউ প্রতিবাদ কিংবা পরামর্শ দেয়ার নেই!।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তা ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে! উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সময়মত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন না করলে নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বাধাঁগ্রস্ত হবে বলে সচেতনমহলের আশংকা। কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে মর্মে খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা গাড়ীটানা সংলগ্ন ব্রিজে গেলে কথা হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ল্যাব্রেটরী টেকনেশিয়ান মো. খাদেমুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, এখানে যেসব মালামাল আনা হয়েছে তা মানসম্পন্ন এবং পরীক্ষিত। কেন একই সাইজের পাথর ও স্থানীয় অপরিস্কার বালু ব্যবহার ব্যবহার করছেন প্রশ্ন করলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা মানিকছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এস.ও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের কোথাও শতভাগ কাজ হয় না। তবুও আমি গুনগতমান ঠিক রেখে ব্রিজগুলোর কাজ তদারকি করছি। তবে একই সাইজের পাথর ব্যবহারের নিয়ম নেই বলে তিনি অপকটে তা স্বীকার করেন!

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করলে যৌথ কাজের অংশিদার মো.আলাউদ্দিন বলেন,এ অঞ্চলের বালু মোটা হওয়ায় সিলেট সেন্ট প্রয়োজন হয় না। এছাড়া নির্মান সামগ্রী নিয়মিত ল্যাব্রেটরিতে পরীক্ষা করে ব্যবহার করছি। আশা করি কাজের গুনগতমান খুব ভাল হবে।

Exit mobile version