সিনহা হত্যা: প্রদীপসহ প্রধান ৩ আসামিকে ঘটনাস্থলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদ


বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপসহ সিনহা হত্যা মামলার প্রধান ৩ আসামীকে মেরিন ড্রাইভের ঘটনাস্থলে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। ঘটনাস্থলেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি হুবহু উপস্থাপন করে দেখানোর মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র দেখেছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ঘটনাস্থলটি ঘটনার দিন যেরকম ছিল, সেভাবেই সাজানো হয়েছিল। ঘটনার সময় মেজর (অবঃ) সিনহা মো. রাশেদের ব্যবহৃত গাড়িটির মতো একটি প্রাইভেট কার রাখা হয়েছিল ঘটনাস্থলে। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই সেদিন ঘটনাটি কিভাবে সংঘটিত হয়েছিল- তা হুবুহু দেখিয়েছেন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা। তাদের ঘটনার বিবরণ খুব সুক্ষভাবে প্রত্যক্ষ করছে র্যাব কর্মকর্তারা।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তাফা সরওয়ারের নেতৃতে র্যাবের একটি দল বেলা দেড়টায় সিনহা খুনের ঘটনাস্থল বাহারছড়া শাপলাপুরে পৌঁছায়।
দুপুর ২টা পর্যন্ত র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তাফা সরওয়ার, র্যাবের আইন ও মিডিয়া উইং প্রধান লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এবং সিনহা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক সিনিয়র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ঘটনাস্থল ও আশপাশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এসময় স্থানীয় লোকজনের সাথেও কথা বলেন র্যাবের কর্মকর্তারা।
পূর্ব সিদ্ধান্ত মতো তদন্তের অংশ হিসেবে ২টায় কিভাবে সিনহাকে হত্যা করা হয়েছিলো তার প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে ঘটনার রেকি অর্থাৎ রেকি (লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ, আক্রমণপূর্ব পর্যবেক্ষণ, আক্রমণের কলাকৌশল) শুরু করেন। এই জন্য একটি সাদা কার ব্যবহার করা হয়। আসামীদের বর্ণনা মতে রেকি পরিচালনা করা হয়। বেলা ৩টার দিকে রেকি সম্পন্ন হয়।
রেকিতে ওই ঘটনার সাথে মিল রেখে প্রথমে এএসআই্ নন্দদুলালকে গাড়ি থেকে তার ভূমিকার চিত্র ধারণ, এরপর লিয়াকত আলী ও সর্বশেষ সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের রেকি নেয়া হয়। এসময় তাদেরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়।
মাত্র দুই মিনিটে কিভাবে সিনহা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল– মূলতঃ তারই একটি মহড়া এবং নানাভাবে বিশ্লেষণ। এর মাধ্যমে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঘটনার প্রতিটি সেকেন্ডকে নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখছেন- কেন এবং কিভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আসামীদের কাছ থেকে ঘটনার প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে তথ্য নিয়েছেন। রিমান্ডে থাকা বরখাস্তকৃত টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও বরখাস্ত হওয়া এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন র্যাবকে।
দুপুরে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে ঘটনার সাক্ষ্য গ্রহণ। হত্যা মামলার প্রধান ৩ আসামি পৃথক পৃথকভাবে র্যাবকে ঘটনা কিভাবে ঘটেছিল তা বর্ণনা করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই খুন হওয়া মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এরপর ৫ আগস্ট তার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী, নন্দলাল রক্ষিত, সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া সহ ৯জনকে আসামি করে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। পরে মামলা টেকনাফ থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু হয়। এই মামলায় এজাহারভুক্ত নয় আসামীর মধ্যে সাত জন গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়াও পরে আসামীভুক্ত বাহারছড়ার স্থানীয় তিনজন ও এপিবিএন এর তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।