সীমান্তে গোলাগুলি ও বাঘের ভয়ে খামার-ঘর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছেন পাহাড়িরা
মিয়ানমার সীমান্তের ৪১ পিলার নিকটবর্তী রেজুআমতলী এলাকা । সীমান্তের এ এলাকা ও বাইশফাঁড়িসহ অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকায় এক মাস ধরে গোলাগুলিতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আছে কয়েকশত পরিবার । যাদের অধিকাংশই উপজাতি। বাকিরা বাঙালি। তারা খামার করে বা বসতগেড়ে সে সীমান্ত পয়েন্টে জুমচাষ ও অন্যান্য বাগান করে আসছিলো। গোলাগুলিতে তারা বাগান ছেড়ে আসলেও মাঝে মধ্যে ঘুরে আসতো তাদের সেসব চাষাবাদ এলাকা ।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন জুমচাষি টুইমং মার্মা, চাইদামা মার্মা, অথৈ তংচঙ্গা ও কালাছে তংচঙ্গা। তারা বলেন, সীমান্তের ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ পিলারের শূন্যরেখার মিয়ানমার অভ্যন্তরের গহীন বনাঞ্চালে অবস্থানকারী বিদ্রোহী আরকার আর্মির স্বশস্ত্র যোদ্ধারা রাখাইন রাজ্য দখলে মণ্ডু দিকে মোভ করলে জনশূন্য হয়ে পড়ে এ বিস্তৃর্ণ বন এলাকা। যদিও এর আগে এ বনে বিচরণ করতো অনেক হিংস্র প্রাণী। মিয়ানমার বিদ্রোহী আরকান আর্মির যোদ্ধারা এ বন ছেড়ে গেলে জনশূন্য এ বনাঞ্চলে বনের অনেক পশু ফিরে আসে আপন আলয়ে। আবার এদের অনেক পশু গোলাগুলির তাড়া খেয়েও আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের নিরাপদ বনে ।
জুমচাষিরা আরো বলেন, সে সব পশুর মধ্যে চিতা বাঘ, রাম কুকুর ও কালো ভল্লুক এখন এ বনে অবস্থান করছে। যে সব পশু খাবারের সন্ধানে মরিয়া। পুরো বন তারা বিচরণ করছে খাই খাই মনোভাবে।
তারই ধারাবাহিকতায় বন্য পশু গুলো জুমচাষি ও সেখানকার বসতঘরে পালিত পশু-পাখি শিকার করা শুরু করে আজ ২ সপ্তাহ। শেমা রাণী বলেন, গত ৭ দিন আগে এ বন এলাকায় তার ৩টা ছাগল চিতা বাঘে খেয়ে ফেলেছে। চাইদামা মার্মা বলেন, রাম কুকুর তার গৃহপালিত গরু ও ছাগল খেতে এসেছে বার বার। এমন কি তাদের দিকে ও অনেক বার হামলা করেছে। ওলাও তংচঙ্গা বলেন, একদিকে গোলাগুলি অন্য দিকে বন্য পশুর হামলা তাদের পাড়া ছাড়া করে এখন তারা গ্রামে অস্থায়ী বাসা বেধেঁ দিন কাটাচ্ছে।
খামারি ও সেখানকার বাসিন্দারা আরো বলেন, চিতা বাঘ, ভল্লুক ও রাম কুকুরের ভয়ে খামার ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে অর্ধ-শতাধিক পাহাড়ি পরিবার। তারা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে অস্থায়ী এ বসতঘরে। তারা সরকারের কাছে সহায়তা চান।
এ দিকে বাইশফাঁড়ির দক্ষিণের সীমান্তের একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ পার্বত্যনিউজকে বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩৮ পিলারের অনতিদূরে
মিয়ানমার অভ্যন্তরে একটি সেনা ক্যাম্পে যৌথভাবে আক্রমণ করলে সেনারা ও পাল্টা আক্রমণ করে দু’ঘন্টা ব্যাপি সংঘর্ষ চালান। সংঘর্ষে একজন সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬ জন সেনা নিহত হয়। আর আহত হয় ৯ জন। পক্ষান্তরে বিদ্রোহী গ্রুপের ১ জন নিহত ও ২ জন গুরুতর আহত হয়। এ সময় দু’দলের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে। ফলে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসরতদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অপর দিকে, মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশের সিটুয়ে জেলার রাথিডং ও মংডু জেলার বুথিডং টাউনশীপের বিভিন্ন এলাকায় মিয়ানমার সেনা ও বিজিপির সাথে বিদ্রোহী গ্রুপ AA মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। মিয়ানমার সেনারা বিদ্রোহী আরকান আর্মির সম্ভাব্য আস্তানায় হেলিকপ্টার হতে ভারী অস্ত্র গোলা বর্ষণ ও বিভিন্ন সেনা ক্যম্প হতে সাপোর্ট মটর শেল ফায়ার অব্যাহত রেখেছে । সীমান্তে বসবাসরত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মণ্ডুসহ সীমান্ত এলাকার লোকজন পাড়া গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে।
বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে আসছে বাংলাদেশে। ধারণা করা হচ্ছে সরকার বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে তমুল লড়াই চলছে। বিশেষ করে শনিবার ও এর আগের দু’দিন রাতে এবং সকালে গোলাগুলির আওয়া খু্ব বেশি শুনা যায়। দিনে কম।
আর বন্য পশু বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়েই নিশ্চিত করবেন বলে জানান।