উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিদর্শন, ২ মাসের মধ্যে কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত

সীমান্ত জটিলতায় থমকে আছে রামগড় স্থলবন্দরের ১২৫ কোটি টাকার কাজ

fec-image

৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করা না গেলে বিশ্ব ব্যাংক এ প্রকল্পের অর্থায়ন প্রত্যাহার করার আশঙ্কা করছেন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় সীমান্তের দেড়শ গজের বাহিরে জরুরিভিত্তিতে অস্থায়ী টিনশেড ভবন নির্মাণ করে আগামী দুই মাসের মধ্যে ইমিগ্রেশনসহ বন্দরের কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস যাবৎ থমকে আছে রামগড় স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ। সীমন্তের ১৫০ গজের মধ্যে অধিগ্রহণকৃত রামগড় স্থলবন্দরে জায়গায় স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকায় সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় । ফলে অবকাঠামো নির্মাণের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ সত্ত্বেও দীর্ঘ ৬ মাসেও প্রায় ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ আরম্ভ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করা না গেলে বিশ্ব ব্যাংক এ প্রকল্পের অর্থায়ন প্রত্যাহার করার আশঙ্কা করছেন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় সীমান্তের দেড়শ গজের বাহিরে জরুরিভিত্তিতে অস্থায়ী টিনশেড ভবন নির্মাণ করে আগামী দুই মাসের মধ্যে ইমিগ্রেশনসহ বন্দরের কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (২২ জুন) রামগড়ে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বুধবার দুপুরে প্রতিনিধিদলটি রামগড়ের মহামুনি এলাকায় অধিগ্রহণ করা স্থলবন্দরের জায়গা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরে তারা রামগড় পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করেন। নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আলমগীর, প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. সরোয়ার আলম, অতিরিক্ত ডিআইজি (ইমিগ্রেশন, স্থল ও সমুদ্র বন্দর) মো. মনিরুজ্জামান, রামগড় ৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মো. আলীমুল্লাহ, রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দাকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত ও পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে দুই মাসের মধ্যে ইমিগ্রেশনহ বন্দরের কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত ছাড়াও বাংলদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে রামগড় স্থলন্দরের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় বন্দরের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রামগড় স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে রামগড়ের মহামুনি এলাকায় অধিগ্রহণকৃত ১০ একর জায়গায় বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর মধ্যে আইসিপি, কাস্টমস, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন, পোর্ট বিল্ডিং, ট্রান্সশিপমেন্ট শেড, ওয়্যার হাউজ, ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন অফিস ও আবাসিক ভবন ইত্যাদি নির্মাণের জন্য ১২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মনিকো লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে প্রকল্প এলাকায় ওর্য়াকার শেড নির্মাণ, নির্মাণ সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সাইডে নিয়ে আসে। প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নির্মাণ শ্রমিক সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন লোকবল যোগদান করে এ প্রকল্পে।

প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সমাপ্ত করার পর গত ১১ জানুয়ারি কাজ শুরু করলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এতে বাধা দেয়। সীমান্তের জিরো রেখা থেকে দেড়শ গজের মধ্যে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে আর্ন্তজাতিক সীমান্ত আইনে বিধিনিষেধের কারণ দেখিয়ে বিএসএফ বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। এদিকে, প্রকল্পের কাজ বন্ধ হওয়ার পর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বাংলদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর, প্রকল্প পরিচালক মো. সরোয়ার আলমসহ বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে রামগড়ে স্থলবন্দরের প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন । প্রতিমন্ত্রী সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মাধ্যমে বিএসএফের বাধার বিষয়টি সুরাহা করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও এর প্রায় ৪ মাস পরও সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যার কোন সমাধান হয়নি।

বাংলাদেশ রিজিয়নাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১ এর আওতাধীন রমগড় স্থলবন্দর প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. সারোয়ার আলম জানান, প্রকল্পের কাজ করার সম্মতির জন্য বিএসএফের চাহিদা অনুযায়ী গত ৯ মে রামগড় ৪৩ বিজিবি’র মাধ্যমে প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যান, ডিজাইন, ড্রয়িং, লে-আউট প্রভৃতি তথ্যাদি বিজিবির মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও তাদের কাছ থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে স্থলবন্দরের কাজ শুরুর বিষয়টি এখনও থমকে আছে।

৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন,’ আর্ন্তজাতিক সীমানা আইন অনুযায়ী জিরো রেখা হতে ১৫০ গজের মধ্যে কোন পক্ষই স্থায়ী কোন অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ বা স্থাপন করতে পারবে না। রামগড় স্থলবন্দরের অধিগ্রহণ করা জায়গাটি ১৫০ গজের মধ্যে হওয়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কাজে বাধা দেয়। তিনি বলেন, কাজের সম্মতির জন্য প্রকল্পের যাবতীয় তথ্যাদি বিএসএফের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে তারা কাজ করতে দেবে।’

বুধবার (২২ জুন) প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, স্থলন্দরের নির্মাণকাজ শুরু করতে আনা বিভিন্ন ধরণের ভারী যন্ত্রপাতি, নির্মাণ সরঞ্জাম, ভ্যাহিক্যাল ইত্যাদি খোলা আকাশের নীচে পড়ে আছে। প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ওর্য়াকারগণ অলস সময় কাটাচ্ছেন। মনিকো লিমিটেডের স্থলবন্দর প্রকল্পের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, গত ২৮ অক্টোবর কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঐ মাসেই তারা প্রকল্প এলাকায় চলে আসেন। নভেম্বর ও ডিসেম্বর এ দুই মাসে কাজ শুরুর সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এরমধ্যে কাজের লে-আউটও নেওয়া হয়। ১০ জানুয়ারি কাজ শুরু করার একদিন পর ১১ জানুয়ারি বিএসএফ কাজে বাধা দেয়। তিনি বলেন, বিএসএফ প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জায়গায় লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে ঐ স্থানের ভিতরে কোন প্রকার কাজ না করতে বলে দেয়। ফলে তারা কাজ বন্ধ করে দেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন