মাটিরাঙ্গা-পানছড়ি- দীঘিনালা-সাজেক সীমান্ত সড়ক

সীমান্ত সড়ক কারো জন্য স্বস্তির, কারো জন্য অস্বস্তির কারণ কেন?

fec-image

অদ্ভুত এক অপপ্রচার চালাচ্ছে ‘হিল ভয়েস’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল। ‘রাস্তা চাই না’! শিরোনাম দেখে প্রথমেই আপনার ভ্রম হতে পারে, কথাটা হয়তো বা ভুলভাবে উদ্ধৃত হয়েছে, ওটা হয়তো হবে ‘রাস্তা চাই’।

সারাদেশের মানুষ বছরের পর বছর কয়েক কিলোমিটার সড়কের জন্য কত জায়গায় ধর্ণা দেয়, মানববন্ধন করে। আর এরা কি না সড়ক না করার দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে!

বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে খাগড়াছড়ির সীমান্তবর্তী উপজেলা পানছড়িতে। এখানে তৈরি হচ্ছে মাটিরাঙ্গা-তানাক্কপাড়া-লোগাং-সাজেকমুখী সীমান্ত সড়ক।

এখানে আগেই রাস্তা ছিলো, তবে অতটা প্রশস্থ ছিল না। এ পথ দিয়ে বিজিবি তাদের ক্যাম্পে যাতায়াত করে। এখন শুধু রাস্তাটি প্রশস্থ এবং পাকা হবে। এখানে কোনো সংরক্ষিত বন নেই। এই রাস্তা হলে পানছড়ির সাথে উত্তরের দূরবর্তী শিলাছড়া ও সাজেককে সংযুক্ত করা যাবে।

এর ফলে দুর্গম এবং গভীর জঙ্গলে নাগা, ত্রিপুরাসহ ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আনাগোনা বন্ধ হবে। ২৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় যেখানে রাষ্ট্রের কোনো বাহিনীর উপস্থিতি এতোদিন ছিলো না , এখন সহেজই সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ করা যাবে। এসব এলাকা অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় একসময় শান্তিবাহিনীর বড় একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এই এলাকায় ছিলো।

সীমান্তবর্তী হওয়ায় তৎকালীন শান্তিবাহিনীর অধিকাংশ গোপন আস্তানা এসব এলাকাকে ঘিরেই ছিলো। আগামী দিনগুলোতে যে কোনো প্রকার সংঘাতে গোপন আস্তানা তৈরির দরকার হলে এসব এলাকাই বেস্ট। এখন রাস্তা তৈরি হলে বিশাল এই দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী সহজেই প্রবেশ করতে পারবে।

সে কারণেই এই সীমান্ত সড়ক শান্তিবাহিনীর দোসরদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। তাই বন উজার হওয়ার গল্পটা বানোয়াট। এখন পাহাড়ের গাছ নামে তারাবোন ছড়া দিয়ে, রাস্তা হলে মানুষের কষ্ট কমবে। স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘ হাঁটা পথের কষ্ট লাঘব করবে এই সড়ক।

অন্যদিকে সড়কটি ইউপিডিএফ এবং জেএসএস’র সম্ভাব্য সংঘর্ষে জেএসএসকে চাপে ফেলবে। দুই দলই তাদের গোপন আস্তানার (হাইডআউটগুলোর) গোপনীয়তা হারাবে এই সড়কের কারণে। সে কারণেই কিছু মানুষ এই সড়ক নির্মাণ না করার ব্যাপারে শ্লোগান দিচ্ছে। আসলে এসব প্রতিবাদ আর যুক্তি সব ভুয়া কথা।

নারাইছড়ি, তক্কীরায় পাড়া এলাকার বিপুল মানুষ, যারা দীর্ঘ পথ হেঁটে লোগাং, পুঁজ গাও, পানছড়িতে আসতো তাদের জন্য এই সড়ক হবে আশির্বাদ স্বরূপ।

এই সীমান্ত সড়কের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এই সড়ক পর্যটকদের জন্য হবে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সাজেক এখন সকলেরই লক্ষ্য, এতদিন শুধু দীঘিনালা-বাঘাইহাট হয়েই সাজেক যেতে পারছে পর্যটকরা। মাটিরাঙ্গা-পানছড়ি-দীঘিনালা-সাজেক সীমান্ত সড়ক হলে, এই পথেও পর্যটকদের ভিড় বাড়বে।

তাছাড়া, এটা চোরাচালানের পথকে বন্ধ করবে। বিশেষ করে, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান বন্ধ করবে। এই রাস্তা নিঃসন্দেহে দেশের নিরাপত্তাকে বৃদ্ধি করবে। আর শনখোলাতে আর্মি ক্যাম্প আগেও ছিলো। এখন রাস্তা তৈরির জন্য এটা কাজে লাগবে।

এসব কারণেই এই সীমান্ত সড়ক উপজাতি সন্ত্রাসীদের গাত্রদাহের কারণ হবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক। সব কিছুতেই এদের মধ্যে স্ববিরোধিতা দেখা যায়। একদিকে বলবে উন্নয়ন হয়নি, অবহেলিত, অন্যদিকে এখন রাস্তা হচ্ছে তাতেও তাদের কষ্ট লাগছে। আসল ব্যাপার হলো এই সড়ক জেএসএস, ইউপিডিএফ, নাগা, ত্রিপুরার বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর আরামের ঘুমকে হারাম করে দেবে।

এসব কারণেই সীমান্ত সড়ক হওয়ার কথায় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো অস্থির হয়ে উঠেছে। অথচ, আমাদের ঘিরে ভারতে সীমান্ত সড়ক অনেক আগে থেকেই আছে।

এখানে কর্মরত বিজিবি সদস্যদের দীর্ঘ পথ হাঁটার ক্লেশ থেকে মুক্তি দেবে এই সীমান্ত সড়ক। যে পথে ৩ দিন হেঁটে সর্ব উত্তরের ক্যাম্প নারাইছড়িতে যেতে হতো, সড়ক নির্মাণ হলে তা হবে মাত্র এক ঘণ্টার পথ। আসলে তারা আমাদের সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যদের এতো স্বস্তিতে থাকতে দিতে চায় না, সে কারণেই হিল ভয়েস এতো চিল্লাফাল্লা করছে।

লেখকের আরো লেখা পড়ুন:

পানছড়িতে সেনাবাহিনীকেও চাঁদা দিতে হবে!

পানছড়ির জীবনম্বয়ীর মতো কত পাহাড়ি তরুণীর স্বপ্ন যে ভেঙে যাচ্ছে তার হিসাব কেউ জানে না

দিনের আলোয় বিদ্বেষ ছড়ালেও রাতে সেনাবাহিনীর কাছে নিরাপত্তা চাইতেন জেএসএস নেতা

ইউপিডিএফ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল আজকের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে

পাহাড়ের লাভ জিহাদ এবং ধর্মান্তকরণের ফ্যাক্ট ও মিথের চিত্র

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন