সুযোগ দিলে জামায়াত হবে দেশ-মানুষের জানমালের পাহারাদার

fec-image

অন্যের মত ও মানবতাকে যারা শ্রদ্ধা করবে তারাই বাংলাদেশে রাজনীতি করবে। কিন্তু ফ্যাসিজমের মাধ্যমে যারা রাজনীতি করবে তাদের জায়গা বাংলাদেশ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, কোনো অপশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না। আমরা কোনো অন্যায়ের কাছে আপস করব না। কোনো লুটের মালে ভাগ বসাব না। আল্লাহ যদি দেশ খেদমতে কবুল করেন তাহলে ইনশাল্লাহ সেবক হব, দেশের মালিক হব, না। মানুষের জানমাল আবরুর রক্ষায় জামায়াতে ইসলামী হবে চৌকিদার, পাহারাদার।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের লগি-বৈঠার নৃশংসতার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামি এ সভার আয়োজন করে।

জামায়াত আমির বলেন, আপাতত দৃশ্যত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিস্টের দোসররা তাদের কর্মের উপহার পেয়েছেন গত ৫ আগস্ট। তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তার সঙ্গীরা পালানোর চেষ্টা করেছেন। কেউ চুরি করে পালিয়েছেন, কেউ বা ধরা পড়েছেন। যারা পালিয়েছেন বা ধরা পড়েছেন মানুষ হিসেবে তাদের এরচেয়ে মৃত্যুই ছিল শ্রেয়। কারণ কোনো রাজনীতিবিদের জন্য পালানো মানায় না। রাজনীতি করবেন রাজকীয় মন নিয়ে, রাজনীতি করবেন পুরো জাতির জন্য। যদি সেটাই করেন তাহলে পালাতে হবে কেন?

জেনেশুনে যারা অন্যায় করে তা অপরাধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কে পালায়, চোর পালায়, ডাকাত পালায়, লুটেরা, গুমকারী, ধর্ষক পালায়। কোনো ভালো মানুষ পালায় না। বিচারের রায় তো তারাই পালিয়ে দিয়েছেন। এখন বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার হয়ত বিচার শেষ করতে পারবেন না। কিন্তু শুরুটা করতে হবে। আর এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে। যেদিন লগি বৈঠার তাণ্ডবে দেশ, রাজনীতি, সমাজ তার পথ হারিয়েছিল। মানবতার মৃত্যু হয়েছিল। ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাদের হত্যা করা হয়েছে প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার করতে হবে।

জামায়াত আমির বলেন, যারাই ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল তাদেরই খুন ও গুমের শিকার হতে হয়েছে। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ‍খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠনের মামলা দেওয়া হয়েছে। পাতানো বিচারের নামে বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। সেই নিকৃষ্ট দলটিকে মানুষ কিন্তু দেখেছে ধর্ষক হিসেবে। ধর্ষণের সেঞ্চুরি কারা করেছিল জানি জেনেছে। আওয়ামী লীগের লম্পট নেতা-কর্মী মন্ত্রীদের লাম্পট্যের ইতিহাস অল্প হলেও গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

গুম খুনের সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ চালু করেছে দাবি করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, খুন গুমের সংস্কৃতির উৎকর্ষ দান করেছেন শেখ হাসিনা। জায়গায় জায়গায় আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছে। এরকম আয়নাঘরে আমিও ১৩ দিন ছিলাম। তবে আমাকে আগে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেই আয়নাঘরে আমি অনেক আলেম-ওলামাকে দেখেছি যাদের আদালতে তোলাই হয়নি। অথচ দেশের প্রচলিত আইনে বলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। গ্রেপ্তারের পরপরই পরিবারকে জানাতে হবে। আপনজনরা জানতোই না তারা বেঁচে নাকি মারা গেছে।

১৯৯৬ সালে হাতজোর করে অতীতের দলীয় অপরাধের জন্য মাফ চেয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের ব্যাপারে একটা মিথ জারি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা যা বলে তা করে না, যা করে তা বলে না।’ তারা কিন্তু এবার না বলেই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। জাতির ওপরে জেদ মেটাতে গিয়ে নিরস্ত্র মানুষকে খুন করে পেট্রোল ঢেলে আগুনে ছাই করে দিয়েছে। আবার অনেকে বলে আওয়ামী লীগ নাকি রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। যারা গোটা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? ভোট চাইবার, ভোটের ময়দানে ফিরে আসার মতো নৈতিক অধিকার তাদের নেই। যদি জনগণের ভোটেই তাদের আস্থা বিশ্বাস থাকত তাহলে গত তিনটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতো। তারা তো সেটা চায়নি। তারা চেয়েছে মেরে কুটে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে। এজন্য তারা মানুষকে মেরে কেটে পুড়িয়ে শেষ রক্ষার চেষ্টা করেছে। অথচ যাকে ইচ্ছে ক্ষমতা দেন আবার যাকে ইচ্ছে ক্ষমতা কেড়ে নেন। তারা হয়ত সেটা কল্পনা করেনি, আমরাও করিনি।

বাংলাদেশকে যারা গড়তে চান তাদেরকে জন আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান ও অন্তরে ধারণ করে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণ কি চায় সেটা বুঝতে হবে রাজনীতি করতে হবে। সেটা পারলে আমরা পাব জনগণের দোয়া সহযোগিতা। আবার যদি আমরাও ভুল করি তাহলে যে জনগণ ফুঁসে উঠতে পেরেছিল চব্বিশে তারা আবার যেকোনো সময় ফুঁসে উঠতে পারে। সুতরাং সাবধান হতে হবে। জাতীয় জীবনে কোনো সংকট আমরা চাই না। মৌলিক স্বার্থে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আমাদের দেশবাসীর স্বপ্নের বৈষম্যমুক্ত দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ চাই। সেই বাংলাদেশের জন্য আমরা যুব সমাজকে যাচাই করে নিতে চাই। যুব সমাজের ওপরে আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে। যারা দায়িত্ব নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছে তারা আমাদের আগামীর বাংলাদেশও গড়ে দিতে পারবে। আমরা তারুণ্য নির্ভর, ইনসাফভিত্তিক সমাজ রাষ্ট্র বিনির্মাণে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতের সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলে তুলে ধরুন। আমার মধ্যে কালিমা থাকলে আমাকেও ছাড় দেবেন না। জাতির বিবেক দর্পণ হিসেবে সব ক্ষেত্রে সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার আহ্বান জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন