parbattanews

সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীলতায় বেঁচে গেল সোনাপতি চাকমা

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীলতায় বেঁচে গেল রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার বগাখালী গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা সোনাপতি চাকমা।

রবিবার পুরো জাতি যখন নির্বাচনের আনন্দে মাতোয়ারা ঠিক সেই সময় প্রসব বেদনা শুরু হয় সোনামতির। সন্তান প্রসবের জন্য স্থানীয় ধাত্রীর সহযোগিতা নেয় তার পরিবার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পৃথিবীর আলো দেখার আগে মাতৃগর্ভেই মারা যায় সোনাপতির সন্তান।

উপায়ান্তর না দেখে  সোমবার তার পরিবার বিজিবির স্থানীয় সীমান্ত চৌকিতে গিয়ে সোনাপতির জীবন বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায়। এরপর বিজিবি সদস্যরা দ্রুত বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানান।

সেনাবাহিনী বিমানবাহিনীর সহযোগিতায় একটি হেলিকপ্টার যোগে দুপুরের মধ্যেই সোনাপতিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসস্থ সিএমএইচে ভর্তি করেন। সাথে তার পরিবারের সদস্যরা যান। সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে অস্ত্রোপচারের পর বিপদমুক্ত হয় সোনাপতি চাকমা। গর্ভের শিশু মারা গেলেও প্রাণে বেঁচে যায় সোনাপতি চাকমা।

জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শান্তিরাজ চাকমা বলেন, সোনাপতি আমার এলাকার মেয়ে। আমাদের এলাকায় ভাল কোনো হাসপাতাল না থাকায় তার গর্ভের সন্তানটিকে বাঁচাতে পারিনি। তবে সেনাবাহিনীর কারণে তার মার প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। সেনাবাহিনীকে আগে জানাতে পারলে হয়তো মা ও সন্তান দুজনকেই বাঁচানো যেত।

জানা গেছে, সোনাপতিই শুধু নয়, তার মত দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী অনেক মুমূর্ষ রোগীর প্রাণ বেঁচেছে সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে। এদের মধ্যে রয়েছে পায়ে পচন ধরা বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সদস্য চাথুইমা মারমা, লক্ষীছড়ি থানার পুলিশ কনস্টেবল মংজয় চাকমার নাম উল্লেখযোগ্য।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দুরছড়ি এলাকায় ডায়রিয়া দেখা দিলে সেনা সদস্যদের মানবিক সহযোগিতা দিয়ে প্রায় ৩০টি পরিবারের সদস্যদের সুস্থ করে তোলে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার- এই তিন দেশের সীমান্ত যেখানে একসাথে মিশেছে, এমন দুর্গম এলাকায় এই গ্রামের অবস্থান। রাঙামাটি জেলা সদর থেকে ওই গ্রামে যেতে হলে প্রথমে ইঞ্জিনচালিত বোটে কিছু দূর যাওয়া যায়। এরপর পায়ে হাঁটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। দুর্গম পাহাড়ি চড়াই, উৎরাই পেরিয়ে বগাখালী যেতে প্রায় সাতদিন লেগে যায়। ওই গ্রামেরই এক উচ্ছল তরুণীর নাম সোনাপতি চাকমা। বছরখানেক আগে দয়াময় চাকমা নামে এক যুবকের সাথে বিয়ে হয় সোনাপতির। প্রকৃতির নিয়মে কিছুদিন পর অন্তঃসত্ত্বা হয় সোনাপতি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। বগাখালী গ্রাম ও এর আশেপাশে কোথাও ভাল হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। গর্ভধারণের সময় নারীদের যে ধরনের সেবা শুশ্রুষা পেতে হয় তার কিছুই পায়নি সে। স্থানীয় ঝাড়ফুঁক ও ফকিরের টোটকা চিকিৎসাই পেয়েছে সে।

Exit mobile version