সেনা সহায়তায় ২ দিনে বাড়ি ফিরলো ৩৫ বম পরিবার

fec-image

দীর্ঘ ৯ মাস পর দুই দিনে সেনা সহায়তায় বান্দরবানে ৩৫টি বম পরিবারের ১০০ জন সদস্য নিজ বা‌ড়ি‌তে ফিরেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হওয়ায় কেএনএফের ভয়ে পালিয়ে যাওয়া এসব পরিবারের সদস্যরা গত শনিবার ও রবিবার নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে কেএনএফ সদস্যদের অত্যাচারে পাইন্দু ইউনিয়নের পাইক্ষ্যং পাড়া, প্রাতা পাড়া এলাকাবাসী বাড়ি ছেড়ে উপজেলা সদর, বনজঙ্গল ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল।

রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেলাউ মার্মা জানান, পাইক্ষ্যং পাড়া থেকে ৪০টি পরিবার তাদের সন্তান সন্ততি নিয়ে পাড়া থেকে পালিয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে শান্তি আলোচনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতির কারণে তাদের মধ্যে নিরাপত্তার ব্যাপারে আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পাওয়াতে তারা নিজ ভূমিতে ফিরতে শুরু করেছে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হওয়ার কারণে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. শাহীনুর হকের নির্দেশনা মোতাবেক পাড়াবাসীদের বাকলাই সেনা ক্যাম্প, ১৬ ইস্ট বেঙ্গল নিজেদের ইস্যুকৃত রশদ থেকে ফেরত আসা সকল পরিবারের সদস্যদের ঔষধ, চাল, ডাল, তেল, লবণ, ময়দা, চিনি ও শুকনা খাবার প্রদানসহ নানা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় আশেপাশের পাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া পরিবারগুলো নিজ বাসায় ফিরতে শুরু করেছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প থেকে ফেরত আসা সকল পরিবারের সদস্যদের সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে।

রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, কেএনএফের অত্যাচারে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসন থেকেও সহায়তা দেয়া হয়েছিল।

ফিরে আসা বাসিন্দারা জানান, কেএনএফের ভয়ে দীর্ঘ ৯ মাস যাবত বনজঙ্গলে ও আত্বীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আজকে নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরে আমরা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি।

তারা আরো জানান, নিরাপত্তাবাহিনী শুধু আমাদের নিরাপত্তা নয়, খাদ্য চিকিৎসাসহ নানা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞ।

পাহাড়ে নতুন করে গজিয়ে উঠা পাহাড়ের আতঙ্ক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ গত বছরের অক্টোবর থেকে খুনোখুনি, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সমতলের জঙ্গিদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে পাহাড় অশান্ত করে তুলেছিল। সন্ত্রাসী তৎপরতায় বান্দরবানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে কেএএফের সাথে যৌথবাহিনীর সংঘর্ষে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর চার সদস্য জীবন দিয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে পাল্টা ব্যবস্থা না নিয়ে ঠান্ডা মাথায় পেশাদারিত্বের মাধ্যমে তাদের সব ঘাঁটি দখল করতে সক্ষম হয়। অস্ত্রসহ অনেক কেএনএফ সদস্য নিহত ও গ্রেফতার হয়েছেন।

অশান্ত বান্দরবানকে পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে কেএনএফের মুখোমুখি বৈঠকের পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে নিরাপত্তাবাহিনীর বিশ্বাস। ডিসেম্বর মাসে কেএনএফের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আরেকটি মুখোমুখি সংলাপের কথা রয়েছে বলেও জানা যায়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবান, সেনাবাহিনী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন