parbattanews

সেন্টমার্টিনের গলাচিপা গ্রামে মেরিন পার্কের চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সামগ্রী

teknaf pic 3-6-14 (1)

টেকনাফ প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের  প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপের মধ্যভাগে গলাচিপা গ্রামে ২০০৬ সালে নির্মিত হয় মেরিন পার্ক। দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং গবেষণার জন্য ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু সেটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। দেখভাল করার কেউ নেই। চুরি হয়ে যাচ্ছে পার্কের মূল্যবান সামগ্রী।

 

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ৫৯০ হেক্টরের সেন্ট মার্টিনদ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষায় নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর পার্কটি স্থাপন করে। দুই তলাবিশিষ্ট প্রধান কার্যালয় ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য এখানে তৈরি করা হয় ছয়টি বাংলো ও ১০০ জন ধারণক্ষমতার একটি ডরমিটরি। কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয় ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সোলার প্যানেল ও আটটি বায়ু বিদ্যুতের পাখা। কার্যালয়ে স্থাপন করা হয় ১৫টি কম্পিউটারসহ অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব। এ ছাড়া জাদুঘরে রাখা হয় প্রায় ৫০০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, শামুক-ঝিনুক, প্রবাল ও শৈবাল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কটি এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সরজমিন পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, পার্কের সীমানাবেড়া নেই। সীমানার কাঁটাতার ও ভেতরে বিভিন্ন ভবনের দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছে লোকজন। গবেষণাকক্ষে নেই একটি কম্পিউটারও। খোলা মাঠে স্থাপিত সোলার প্যানেলটিও অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে। মরিচা ধরে ভেঙে পড়ছে বাযুবিদ্যুতের আটটি পাখা। এমনকি পার্কে স্থাপিত নলকূপের ওপরের অংশও চুরি হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পার্কের জাদুঘরে সংরক্ষিত মূল্যবান সামুদ্রিক প্রাণী ও প্রবাল শৈবাল। স্থানীয় লোকজন জানান, তিন বছর ধরে এই পার্কটি দেখাশোনার কেউ নেই। ফলে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে থাকেন না।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেকমের (নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট) একজন কর্মচারী এটি পাহারা দিলেও সম্প্রতি তাদের প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ পাহারাদারের বেতনও বন্ধ হয়ে গেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন বলেন, সিডবি উবিএমপির (কোস্টাল অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট) আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেরিন পার্কটি তত্ত্বাবধান করে। এর পর থেকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্বীপ ত্যাগ করেন। তখন থেকে পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে শোনা যাচ্ছে এ পার্কটি দেখাশোনার জন্য অস্থায়ীভাবে দু’জন লোককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জনবসতিহীন নির্জন এলাকায় পার্কটি স্থাপন করায় সম্পদ লুটের ব্যাপারে খোঁজখবরও রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বীপের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই এক মন্ত্রীর ভাই পার্কটি দীর্ঘমেয়াদি ইজারা নিয়ে পর্যটন ব্যবসা চালুর চেষ্টা চালান। কিন্তু প্রতিবেশ সংকটাপন্ন দ্বীপ এবং সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় পার্কটি ইজারা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক বলেন, পার্কটি দেখভাল করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কেউ নেই। অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে পার্কের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও সম্পদ। ইতিমধ্যে চুরি হয়েছে কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও সোলার প্যানেলের ব্যাটারি, এমনকি দরজা-জানালাও। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারপরও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই মিলে কিছুদিন পরপর সেন্টমার্টিনে গিয়ে মেরিন পার্কটি রক্ষায় শ্রমিকের মতো কাজ করি।

Exit mobile version