সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত নিষেধাজ্ঞায় টেকনাফের অর্থনীতি বিপর্যস্ত

fec-image

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে পর্যটন খাত, স্থানীয় জীবিকা ও টেকনাফের সামগ্রিক অর্থনীতি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই এ সিদ্ধান্তকে ‘রহস্যজনক ও বাস্তবতা-বিবর্জিত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে সেন্টমার্টিনে দুই থেকে তিন লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক ভিড় জমান। দ্বীপটির প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটননির্ভর পেশায় যুক্ত—হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, নৌযান, ফলমূল ও হস্তশিল্প বিক্রিসহ নানা কাজে। কিন্তু পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দ্বীপের জীবিকা একেবারে থমকে গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় গত বছর মৌসুমের মাঝখানে হঠাৎ করেই পর্যটক যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। তখন থেকেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সেন্টমার্টিনের সামগ্রিক পরিস্থিতি। এবারের পর্যটন মৌসুমেও (নভেম্বরের শুরুতে) সীমিত আকারে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কথা থাকলেও, তা ‘রহস্যজনক কারণে’ আবার স্থগিত করা হয়েছে।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, শামুক-ঝিনুকের চেয়েও কি দ্বীপের মানুষের জীবনের মূল্য কম?

দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল গণি বলেন, ‘আমরা সারা বছর পর্যটন মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু এখন পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। দোকান বন্ধ, হোটেল খালি, মাছ ধরা কমে গেছে—সব মিলিয়ে অন্ধকার নেমেছে আমাদের জীবনে’।

টেকনাফের ব্যবসায়ীরা জানান, এ নিষেধাজ্ঞা শুধু সেন্টমার্টিন নয়, পুরো টেকনাফের অর্থনীতিতে ধস নামিয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক জাহাজ, নৌকা, গেস্টহাউস, ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস ও ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষা অবশ্যই জরুরি, তবে একেবারে পর্যটন বন্ধ করে নয়—বরং পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমেই টেকসই সমাধান সম্ভব। পরিবেশ, নিরাপত্তা ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রেখে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের দাবি উঠেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের মতে, এ সিদ্ধান্তের পেছনে প্রশাসনিক জটিলতা, নৌরুটের সীমান্ত ইস্যু ও কিছু গোপন স্বার্থজড়িত মহলের ভূমিকা থাকতে পারে যা জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি।

এক পর্যটন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা বলেন, ‘প্রশাসন চাইলে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন চালু করা সম্ভব ছিল। অথচ হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুরো অঞ্চলকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এটি সত্যিই রহস্যজনক’।

টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনবাসী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন,নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে দ্রুত পর্যটক যাতায়াতের স্বাভাবিক ব্যবস্থা পুনঃচালু করতে, যাতে দ্বীপবাসীর জীবিকা ও স্থানীয় অর্থনীতি আবার প্রাণ ফিরে পায়।

সর্বসাধারণের মতে, রহস্যময় নিষেধাজ্ঞার দ্রুত সমাধান ও সেন্টমার্টিনে টেকসই পর্যটনের নবজাগরণই এখন সময়ের দাবি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন