সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে রোহিঙ্গা যুবকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রমাণ মেলেনি


কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোহিঙ্গার গুলিবিদ্ধের ঘটনা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গার দাবি করছে, সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারযোগে ফেরার পথে জলসীমার মিয়ানমারের অংশ থেকে আকষ্মিক ছোঁড়া গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন। আবার বলছে সে বুঝতে পারছেনা কিভাবে আহত হয়েছে। যদিও ওই রোহিঙ্গার জখমের চিহ্নটি দেখতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্নের মতো। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে আইন শৃংখলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সবধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনার দিন ওই নৌরুট দিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে কোন ট্রলার নাফ নদী হয়ে টেকনাফ আসেনি। মিয়ানমার অভ্যন্তরে সংঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কৌশলে পালিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য মিথ্যাচার করে থাকতে পারে এই রোহিঙ্গা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন উক্ত রোহিঙ্গা যুবকের নাম আলী জোহার (৩০)। তার দেওয়া তথ্য মতে, তার পিতা হামিদ হোসেন। তিনি উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে পরিবারের সাথে কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।
শুক্রবার (১৪ জুন) রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলী জোহার পার্বত্যনিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার সেন্টমার্টিন থেকে চারটি ট্রলারে করে দ্বীপে আটকা পড়া লোকজনকে টেকনাফে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু দ্বীপে আটকে থাকা সবাই সেই ট্রলারগুলোতে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় উঠতে পারেননি।
তিনি বলেন, পরে ওইদিন বিকেলে ৩০ জন একজোট হয়ে একটি কাঠের ট্রলার ভাড়া করে রওনা দেন। শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাশ থেকে কূলে ওঠার কথা থাকলেও ট্রলারের মাঝি সেটা না মেনে তাদেরকে নিয়ে যায় শাহপরীর দ্বীপের পূর্বপাশের ঘাটের দিকে।
চিকিৎসাধীন এ রোহিঙ্গা বলেন, এক পর্যায়ে তাদের বহনকারি ট্রলারটি নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপের পূর্বে পৌঁছালে জলসীমার মিয়ানমার অংশ থেকে আকষ্মিক দুইটি ট্রলার বের হয়ে সীমানার কাছাকাছি এসে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। সেই গুলি এসে লাগে তার ডান পায়ে।
আলী জোহারের পার্বত্যনিউজের কাছে দাবি করেন, নাফ নদীর ৫ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে। আর গুলি লাগার পর অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। তারপর আর কিছু বলতে পারে না। পরে জ্ঞান ফিরে দেখেন উখিয়ার এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে শুক্রবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। মূলত একমাস আগে ক্যাম্প থেকে কাজের জন্য সেন্টমার্টিনে যাওয়ার দাবি করেন তিনি।
তবে আলী জোহারকে কোন দিনই সেন্টমার্টিন দ্বীপে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। সেন্টমার্টিন ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্পীডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম পার্বত্যনিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার ৪টি ট্রলার ছাড়া আর কোন ট্রলার টেকনাফ যায়নি। নাফ নদীতে গোলাগুলি হচ্ছে তাই কোন ট্রলার নাফ নদী হয়ে টেকনাফ যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আলী জোহার হয়তো মিথ্যাচার করছে।
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি পার্বত্যনিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার বোট মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমেদের মালিকানাধীন ৪টি ট্রলারে করে প্রায় ৩০০ মানুষ বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফ পৌঁছায়। এর বাইরে আর কোন ট্রলার নাফ নদী কিংবা বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফ আসেনি।
তিনি বলেন, সব মাধ্যম থেকে খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। এখন গুলিবিদ্ধ দাবি করা রোহিঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি হয়তো মিয়ানমার অভ্যন্তরে গুলিবিদ্ধি হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এখন চিকিৎসা পাবার জন্য মিথ্যাচার করছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন পার্বত্যনিউজকে বলেন, সেন্টমার্টিন থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে ৪টি ট্রলার ছাড়া আর কোন ট্রলার টেকনাফ আসেনি। এখন গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলার যোগে টেকনাফ আসার পথে গুলিবিদ্ধি হয়েছে এই ধরণের কোন তথ্য নেই।