সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বিধিনিষেধ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট

fec-image

পরিবেশগত সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াত, অবস্থানে বিধি-নিষেধ আরোপ করে সরকার যে আদেশ জারি করেছে, সেই আদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে সরকারের বিধি-নিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন ও উজ্জ্বল হোসেন। আদেশের বিষয়ে আইনজীবী আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৮শে অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় একটি আদেশ জারি করে। এটি সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। দেশের জনগণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হলে তা আইন দিয়ে আরোপিত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে হতে হয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মেমোটি আইন নয়। মূলত এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত রুল দিয়েছেন।

গত ২৮শে অক্টোবর পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়মিত পর্যটন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধি-নিষেধ আরোপ করে অফিস আদেশ জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অফিস আদেশে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও সিঙ্গেলস ইউজ প্লাস্টিকের দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশে গত ২২শে অক্টোবর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণে নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়-

ক. বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণপূর্বক সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌযান চলাচলের অনুমতি প্রদান করবে। খ. নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক দিনের বেলায় যাবে এবং দিনেই ফিরে আসবে, রাত্রিযাপন করতে পারবে না। গ. ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপন করতে পারবে। ঘ. পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন দুই হাজারের অধিক হবে না এবং ঙ. সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষাকল্পে সমুদ্র সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো যাবে না; শব্দ সৃষ্টি করা যাবে না এবং বার-বি কিউ পার্টি করা যবে না। পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে উল্লেখিত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারের এসব বিধি-নিষেধ চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি এ এন এম হেলাল উদ্দিন। রিটে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট আটজনকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন