সোনাইছড়ির ইয়াবা সম্রাট আ’লীগ নেতার আস্তানায় পুলিশের হানা: ইয়াবাসহ আটক ২
এলাকার মানুষের দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে ইয়াবা সম্রাট আ’লীগ নেতা সাইফুলের আস্তানায় হানা দিয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ।
খোদ ওসির নেতৃত্বে অভিযানে দুই মাদক কারবারীসহ উদ্ধার করা হয়েছে ১ হাজার ২২০পিস ইয়াবা এবং মাদক বেচাকেনার ১লাখ ৫৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের সময় পালিয়ে গেছে ইয়াবা সম্রাট সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আয়েশা বেগম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৬নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে একটি ইয়াবার চালান পাচার হবে এমন সংবাদের ভিত্তিতে থানার ওসি মুহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালায় পুলিশ।
অভিযানকালে ইয়াবা সম্রাট সাইফুল ও তার স্ত্রী আয়েশা বেগম মাদকের চালানটি নিয়ে বাড়ির পিছনের পাহাড়ে পালিয়ে যায়।
পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশী করে খুচরা বিক্রির জন্য মজুদ রাখা ১ হাজার ২২০পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে খুনিয়াপালং ইউনিয়নের দরিয়াদিঘি এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. সোহেল (২১), ও উখিয়া শরণার্থী ক্যাম্প লম্বাশিয়া এলাকার আবু শামার ছেলে মো. ছলিম প্রকাশ মনু (২৫)কে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম ইউপি মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর তার অবৈধ মাদক ব্যবসা বাড়িয়ে দেয়। একসময় সে ক্ষমতাসীন দলের পদ আদায় করে নেয়। বর্তমানে সে সোনাইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
দীর্ঘদিন সে এলাকায় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাদকের কারবার চালিয়ে গেছে। সর্বশেষ নাইক্ষ্যংছড়ি থানার এই দুঃসাহসিক অভিযানের কারণে সোনাইছড়ি এলাকায় প্রশংসিত হয়েছেন। অনেকে বলছেন, বর্তমান ওসির দ্বারা উপজেলাকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব হবে।
সূত্র মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-৬ এর ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বরের এক স্মারকপত্র সূত্রে মাদকদ্রব্য অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) প্রণব কুমার নিয়োগী স্বাক্ষরিত গত ২৩ জানুয়ারি একটি বিশেষ প্রতিবেদনে স্থান পাওয়া ৭৬৪ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় বান্দরবানের ২৯ জনের নাম পাওয়া গেছে।
যার মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার রয়েছে ২১ জনের নাম। এখানে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের ৯ জন, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ২ জন, ঘুমধুম ইউনিয়নের ১০ জন। এই তালিকার শীর্ষে ছিল সাইফুল ইসলাম ও হ্রাথোয়াইচিং প্রকাশ লাতু মারমা।
বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়িতে ইয়াবা ব্যবসার সাথে কথিত জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার, ইলেক্সট্রিক্স ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, হুজুর, কাঠ ব্যবসায়ী, ফার্মেসী ব্যবসায়ী, মোটরসাইকেল চালক, বাগান মালিক, মোবাইল দোকানদার, চাকুরিজীবী, ঔষধ কোম্পানীর এমআর, রিক্সা চালক, বেকার যুবক, সেলসম্যান, সমাজের অনেক সম্মানী ব্যক্তিসহ নতুন পুরাতন অন্তত শতাধিক ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে।
যারা নিজেদের পূর্বেকার পেশার আড়ালে বর্তমানে মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে।
অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, অভিযানে দুইজনকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে। পলাতক আরও দুই আসামীকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এই ঘটনায় ৩০ অক্টোবর থানায় মামলা হয়েছে (মামলা নং-১৮)।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমরান বলেন- কোন মাদক ব্যবসায়ী আ’লীগের রাজনীতিতে থাকতে পারেনা। তবে সাইফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।