parbattanews

স্ত্রীর অভিযোগে স্বামীর দণ্ড: ইউপি সদস্যের বেদড়ক পিটুনিতে নারীসহ আহত ২

kawkhali-news-pic-11-10-16-copy

কাউখালী প্রতিনিধি:

লেখাপড়ায় অমনোযোগী মেয়েকে শ্বাসন করতে গিয়ে স্থানীয় মেম্বার কর্তৃক নিজেই অপশাসনের শিকার হলেন রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার আবু মুছা (৩৫)। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঘটে যাওয়া পারিবারিক সামান্য ঘটনার বিচার করতে গিয়ে দু’ভাই বোনকে বেদড়ক পেটালেন বেতবুনিয়া ১নং ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম মেম্বার। রবিবার সন্ধ্যা সাতটায় উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের গুইয়াতল নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। আহত দু’জনকে কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের গুইয়াতল এলাকার বাসিন্দা আবু মুছা (৩৫) পেশায় একজন বাবুর্চি। বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র ও টিএন্ডটির দায়িত্বে থাকা পুলিশসহ দৈনিক প্রায় দু’শতাধিক লোকের রান্নাবান্নার দায়িত্ব তার কাঁধে। ক্লান্ত মুছা বাসায় গিয়ে মেয়েকে পড়ার টেবিলে না দেখে শাসন করার চেষ্টা করে। এ সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ের মুছা স্ত্রী আমেনাকে চড়-থাপ্পড় মারে।

এদিকে ঘটনার বিচার চেয়ে স্ত্রী আমেনা স্থানীয় ১নং ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম মেম্বারকে অভিযোগ করলে মেম্বার গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে মুছাকে  তাৎক্ষনাৎ হাজির হওয়ার নির্দেশন দেন। দু’শাতাধিক লোকের রান্নার দায়িত্বে থাকা মুছা তৎক্ষনাৎ হাজির হতে না পারলেও রাতে হাজির হন গুইয়াতলস্থ মেম্বারের ফার্নিচারের দোকানে। এ সময় মুছা যথা সময়ে হাজির না হওয়ায় উত্তেজিত হয়ে ইউপি সদস্য সেলিম মেম্বার হাতের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে বেদড়ক লাঠি পেটা করেন মুছাকে। মেম্বারের পিটুনি থেকে ভাই বাঁচাতে বোন কুলসুমা বেগম (২৩) এগিয়ে আসলে মেম্বার মুছাকে বাদ দিয়ে শতাধিক লোকের সামনে লাঠি দিয়ে কুলসুমাকেও মারতে থাকে।

এতেও ক্ষান্ত হননি ইউপি সদস্য সেলিম। ইয়াবা ট্যাবলেট ও মদ সংগ্রহ করে মুছা ও কুলসুমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেতবুনিয়া পুলিশের হাতে তুলে দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে ফাঁড়িতে ছুটে যান বেতবুনিয়া চেয়ারম্যান খইচাবাই মারমা। তিনি ঘটনা তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দিয়ে ফাঁড়ি থেকে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় পাশাপাশি দুটি বেডে ভাই বোন দু’জন শুয়ে আছেন। ব্যাথার যন্ত্রনায় চিৎকার করছেন কুলসুমা (২৩)।

কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা নার্স মিনু রানী জানান, কুলসুমার শরীরের এমন কোন স্থান নেই যেখানে লাঠির আঘাত পড়েনি।

১১ অক্টোবর ঘটনা ঘটলেও মেম্বারের অব্যাহত হুমকীতে মামলা দূরের কথা হাসপাতালে এসে কারো সাথে ভয়ে কথা বলতেও সাহস পাচ্ছেনা। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর কথা বলতে রাজি হন। মুছা জানান, আমি গরীব মানুষ, কার কাছে বিচার দেব। কাউকে বিচার দিলে মেম্বার আমাকে কেটে লাশ গুম করে দেয়ার হুমকী দিয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মেম্বার সেলিম মারধরের বিষয় শিকার করলেও মেরে ফেলার হুমকীর কথা অস্বীকার করেন। তিনি জানান আমি কোন নারীর গায়ে হাত দেয়নি। স্থানীয়রা ঐ মহিলাকে মারধর করেছে, বরং আমি তাদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করেছি।

কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কেউ অপরাধ করলে তার জন্য আইন আছে, কারো গায়ে হাত দেয়ার অধিকার মেম্বারের নেই। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের আদালতে সুরাহা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান খইচাবাই মারমা জানান, আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এর বিচার করবো। একজন জনপ্রতিনিধি বিচারের নামে কোন নারী বা পুরুষের গায়ে হাত দেবে এটা হতে পারেনা।

Exit mobile version