বান্দরবানে ১১ দফা দাবিতে পুলিশের সমাবেশ

স্বাধীন দেশে দুর্নীতি ও দলবাজি থেকে মুক্ত হয়ে জনতার প্রকৃত বন্ধু হতে চায় পুলিশ

fec-image

‘সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঊর্ধ্বতন আওয়ামী লীগ দালালদের নির্দেশে আমাদের ভাই, আমাদের সন্তাদের উপর গুলি ছুড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তাতে বহু ছাত্রসহ সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েয়ে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের বহু পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ তখন অসহায়, নির্দেশ না শুনলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেন এই আওয়ামী লীগের দালাল কর্মকর্তারা। তাদের নির্দেশ পালন করার কারণে আজকে জনগণ ও ছাত্রদের কাছে পুলিশ ঘৃণা পাত্র। তাই এই স্বাধীন দেশের দুর্নীতিবাজ, দলবাজ পুলিশ প্রত্যাখ্যান করে আমরা জনগণের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে কাজ করতে চাই।’

৯ আগস্ট শুক্রবার বেলা ২টার দিকে বান্দরবানে পুলিশ লাইন্সে ও এপিবিএন কার্যালয়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী পুলিশ সদস্যরা।

বৈষম্যবিরোধী পুলিশ সদস্যরা তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার পদত্যাগের খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যদের বিপদে ফেলে দালাল ও ভুয়া বিসিএস অফিসারগুলো পালিয়ে গেছে। আর সব অপরাধের দায়ভার সাধারণ পুলিশ সদস্যদের উপর ছেড়ে দিয়ে গেছে। দেশের সব পুলিশ সদস্য এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কর্মস্থল যোগদান তো দূরের কথা ছাত্র-জনতার সাথে শত্রুতা কারণে পুলিশদের স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার স্বাধীনতাও হারিয়ে গেছে। তাই এই স্বাধীন দেশে দুর্নীতিবাজ, দালাল ও দলবাজ পুলিশ প্রত্যাখ্যান করে আমরা জনগণের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে কাজ করতে চাই।’

উল্লেখ্য, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন বৈষম্যের বিরোধী পুলিশ সদস্যরা। তাদের সেসব দাবি আদায়ের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ করে বান্দরবানের পুলিশ সদস্যরা।

এ সময় তারা ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলে অংশ নেন শতাধিক বৈষম্যবিরোধী নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্য। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার মেঘলা জেলা পরিষদ সংলগ্ন ২ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এপিবিএন সদস্যরা। পুলিশ কার্যালয় ঘেরাও করে ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘হই হই, রই রই বিসিএসরা গেলি কই” স্লোগান দিতে থাকেন বৈষম্যেবিরোধী পুলিশ সদস্যরা। পরে তারা ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ার পর্যন্ত কর্মস্থলে না যাওয়ার ঘোষণা দেন।

পুলিশ সদস্যদের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে –

১. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার করতে হবে।

২. পুলিশ কোনো সরকার বা রাজনৈতিক দলের অধীনে কাজ করবে না, পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের জনগণের সেবা তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে।

৩. সারাদিনে ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করানো যাবে না।

৪. অধঃস্তন কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোনো অবৈধ বা মৌখিক আদেশ পালন করতে পারবেন না।

৫. অধঃস্তন কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির মতো পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

৬. বার্ষিক নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিন করাতে হবে।

৭. ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতো অধঃস্থন কর্মচারীদের সোর্স মানি দিতে হবে।

৮. বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে ১০ তারিখের মধ্যে টিএ এবং ডিএ বিল পরিশোধ করতে হবে।

৯. নতুন বেতন স্কেল প্রণয়ন করতে হবে।

১০. ঝুঁকিভাতা বাড়াতে হবে।

১১. পুলিশ হেডকোয়ার্টারস থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি পুলিশ লাইন্স, থানা, ফাঁড়ি, গার্ড, ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন