parbattanews

স্বামী জিসানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে থানায় জিডি করলেন ডালিয়া চাকমা

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
অবশেষে স্বামী শাহাদাত হোসেন জিসানের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করলেন খাগড়াছড়ির মেয়ে ডালিয়া চাকমা। কারণ হিসেবে তিনি স্বামী জিসানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।

এদিকে শাহাদাত হোসেন জিসান পার্বত্যনিউজকে বলেন, তার স্ত্রী কারো প্ররোচনার স্বীকার। তিনি এখনো তার স্ত্রীর ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন খাগড়াছড়ির চাকমা জনগোষ্ঠীর ডালিয়া; সেই স্বামীর ‘নির্যাতন সইতে না পেরে’ ঘর ছেড়ে ঢাকায় এসে আশ্রয় নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষার্থী সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে গোপনে ঢাকায় আসার পর তাকে ইউপিডিএফ সদস্যরা অপহরণ করেছে দাবি করে কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়।

শনিবার ডালিয়া বলেন, “খবরটি ভিত্তিহীন। আমাকে কেউ অপহরণ করেনি। নিজে ঢাকায় এসে এক পরিচিতের বাসায় উঠেছি।”

পাশাপাশি স্বামী শাহাদত হোসেন জিসানের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডি করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি বলেন, “মেয়েটিকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে।”

গত বৃহস্পতিবার থানায় দায়ের করা ওই জিডিতে বলা হয়, ডালিয়ার বাড়ি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেড়াছড়া গ্রামে। একই জেলার শালবন পশ্চিম জিয়া নগর এলাকার শাহাদত হোসেন জিসানের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ধরে ২০১২ সালে গোপনে বিয়ে হয়।

বিয়ের আগে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেন ডালিয়া। বিয়ের পর থেকেই জিসান তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এই অত্যাচারের কারণে প্রায় তিন মাস আগে ডালিয়া ‘তালাক’ দিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসার পর তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জিডিতে বলা হয়েছে।

তুলে নিয়ে যাবে, তুলে নিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি করা হবে, কোথাও কাজ করতে দেওয়া হবে না- এমন সব হুমকির কথা জিডিতে লিখেছেন ডালিয়া।

ডালিয়া জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি প্রথম বর্ষে পড়ার সময় জিসানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। জিসানও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র।

বিয়ের খবর জানাজানি হওয়ার পর দুই পরিবারের কেউ তাদের মেনে নেননি। পরে হাটহাজারীতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার জীবন শুরু করেন তারা।

ডালিয়ার অভিযোগ, জিসান তাকে বাসা থেকে বের হতে দিতেন না। কারও সঙ্গে মিশতে দেওয়া হত না। ক্লাসেও যেতে বাধা দিতেন। প্রতিবাদ করলে গায়ে হাত তুলতেন।

“মেরে মুখের চোয়াল ভেঙে দিয়েছে। বাণিজ্য মেলায় প্রকাশ্যে মারধর করেছে।”

তিনি বলেন, “জিসান বাসায় বন্ধুদের সাথে জুয়া ও মাদকের আড্ডা বসাত। এ সময় তার রান্নাঘরের বাইরে আসা বারণ ছিল। বাইরে থেকে রান্নাঘরের দরজা লাগিয়ে রাখত। বন্ধুরা চলে গেলে দরজা খুলে দিত। তখন বাসা থাকত এক নরক।”

এসব কারণে তার লেখাপড়া ব্যাহত হয় জানিয়ে ডালিয়া বলেন, “এক প্রকার সংগ্রাম করে লেখাপড়া চালিয়ে যাই এবং সময় সুযোগ মতো গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বজায় রাখতে পরীক্ষা দিয়ে অনার্স পাশ করি। এরমধ্যেই আমার দুই বছর ড্রপ হয়।”

ডালিয়া জানান, তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পাহাড়িদের সংগঠন ইউপিডিএফের সদস্যরা তাদের বাসায় হামলা চালিয়ে তার বাবাকে মারধর করেছে।

স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ঢাকায় এসেছেন জানিয়ে ডালিয়া বলেন, “ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে করায় বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। সমাজও আমাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখে। এ অবস্থায় আমি এখন পুরোপুরি একা।

“এখন আমার নিরাপত্তা প্রয়োজন, জিসান যে কোনো সময় আমার ক্ষতি করতে পারে।”

ডালিয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জিসান পার্বত্যনিউজকে বলেন, তার স্ত্রীর সস্পর্কে মুখ খুললে সে মানুষের মধ্যে মুখ দেখাতে পারবে না। তাই আমি মুখ খুলবো না। স্ত্রীর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।

তিনি বলেন, তিনি এখনো বুঝতে পারছেন না কি করে এসব হলো। স্ত্রী জন্য, তার লেখা পড়ার জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন, চট্টগ্রামে আলাদা বাসা রেখে দিয়েছেন। তাকে কখনোই পোশাক বা নামাজের জন্য চাপ দেননি।

জিসান বলেন, আপনারা আমার বাসায় যান, আমাদের বাসার আসেপাশের লোক, প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসা করুন তাহলে জানতে পারবেন আমি তাকে কেমন দেখতাম। আমার বলার দরকার নেই।

কথা বলতে বলতে জিসান কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, তালাকের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি কোনো নোটিশও পাননি। পল্লবি থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনি এটা জেনেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ চারদিনও তারা একসাথে ছিলেন।

জিসান বলেন, তার মনে হয় কারো প্ররোচনায় তার স্ত্রী এমনটা করছেন। তার স্ত্রী ভুল ভেঙে ফিরে আসবে বলে এখনো তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডালিয়া চাকমা অপহৃত হয়েছে বলে খবর ভাইরাল হয়। এর একদিন পর তার স্বামী গণমাধ্যমে এই খবর অস্বীকার করে বলেন, তার স্ত্রী অপহৃত হয়নি। সামান্য স্বামী স্ত্রীর মতবিরোধে তার স্ত্রী আত্মগোপন করেছিল।

Exit mobile version