সড়কে ধুলোবালির অত্যাচার

fec-image

পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজার শহর ও উপজেলার একাধিক প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতেও উড়ছে ধুলোবালি। পাশাপাশি যানবাহনের দূষিত কালো ধোঁয়া ও শব্দ মানুষের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিশু ও বয়স্করা।

বিশেষ করে কক্সবাজার শহরের প্রবেশপথ লিংকরোড থেকে কলাতলি এবং হলিডে মোড় থেকে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত সড়ক ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে সড়কের মাঝখানে পাইপলাইনের কাজের কারণে চলছে বিভিন্ন পয়েন্টে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে সময়-অসময়ে বৃষ্টি হলে কাঁদাপানি এবং রোদে ধুলোবালিতে একাকার হয়ে যায় পুরো সড়ক। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ছে। প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে।

রোববার (৩ নভেম্বর) শহরের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে গেছে, ধুলোবালির কারণে পথচারী এবং যানবাহনে যাতায়াতকারীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কক্সবাজার বাসটার্মিনাল থেকে লালদীঘি এলাকা পর্যন্ত ভাঙাচোরা সড়কে ধুলোবালি উড়ছেই। এছাড়া কলাতলি থেকে সার্কিট হাউস সড়ক, লিংকরোড থেকে বাসটার্মিনাল, লিংকরোড থেকে টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, মহেশখালীসহ আরো বিভিন্ন এলাকায় ধুলোবালিতে মানুষের ভোগান্তি ও দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। অনেকে মাস্ক ব্যবহার করলেও গাড়ি যাওয়ার সময় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ধুলোবালির জন্য বন্ধ রাখতে হয় চোখ।

কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট সড়ক এলাকায় রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। ইট, বালু ও খোয়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সড়ক ও ফুটপাতজুড়ে। প্রায় একমাস ধরে এমন অবস্থা। গতকাল ওই এলাকায় কিছু সময় অবস্থান করে দেখা যায়, অনেকে মাস্ক পরে, আবার কেউ কেউ রুমাল মুখে বেঁধে চলাচল করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সংস্কার কাজের কারণে প্রচুর ধুলোবালির সৃষ্টি হচ্ছে। ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করলে ধুলোবালি মেখে একাকার হতে হচ্ছে। যারা সতর্ক হয়ে চলছেন রোগব্যাধি থেকে কিছুটা রক্ষা পাচ্ছেন। আর যারা তা মাখছেন তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অতিরিক্ত ধুলোবালির কারণে প্রতিদিনই মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এ দূষণজনিত বিভিন্ন রোগে।

বলতে গেলে বাসটার্মিনাল থেকে ঝাউতলা প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ধুলোবালির জন্য সড়কও দেখা যায় না মাঝেমধ্যে। ধুলোবালির পাশাপাশি যানবাহনের দূষিত কালো ধোঁয়াও মানুষের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহরের বদরমোকাম এলাকার আরিফ নামের এক যুবক বলেন, ‘ধুলোবালির জন্য আমরা হাঁটতে পারি না। রাস্তার পাশে ফুটপাত দিয়ে হাঁটলেও সেখানেও ধুলোবালি। বৃষ্টি হওয়ার পর সড়কে যে কাদা থাকে সেগুলো শুকিয়ে ধুলোতে পরিণত হয়। কিন্তু বালুগুলো যদি সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হতো তাহলে এ অবস্থা হতো না।’ আর এখন ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণে নিমিষেই বালু উড়ছেই।

টেকনাফ থেকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বৃদ্ধ আবু তাহের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘চিকিৎসক বলেছিল ধুলোবালি এড়িয়ে চলতে। টেকনাফ থেকে এখন এখানে এসে নেমেছি। বিকেলে চিকিৎসকের কাছে যাব। পুরো রাস্তায় ধুলো খেতে খেতে কাঁশি শুরু হয়ে গেছে।

পুরো জেলায় শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালি অন্যতম প্রধান যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেসব সড়ক ভাঙাচোরা ছিল এর মধ্যে বেশ কিছু সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। যেগুলো মেরামত হয়েছে সেখানেও ধুলোবালি উড়তে দেখা গেছে। ধুলোবালির কারণে সড়কের আশেপাশে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়িতেও ক্ষতি হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ধুলোবালি মানব শরীরের ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। সব সময় ধুলোবালি বেষ্টিত পরিবেশে থাকলে ফুসফুসে রক্তপ্রবাহ দুর্বল হয়ে পড়ে। সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, টনসিল প্রদাহ, গলাব্যথা, অ্যাজমা, শিশুদের নিউমোনিয়া এবং বিভিন্ন চর্মরোগ হতে পারে। ধুলোবালিতে বিভিন্ন রোগের জীবাণু থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় ক্যান্সারের জীবাণূও পাওয়া গেছে। অর্থাৎ তা থেকে ক্যান্সারও হতে পারে।

ধুলোবালি ও যানবাহনের দূষিত কালো ধোঁয়ার কারণে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। এসব বিষয়ে চিকিৎসকদের অভিমত, মাস্ক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে সবুজ গাছগাছালি অপরিহার্য। সড়ক থেকে যাতে ধুলোবালির সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি খুবই প্রয়োজন। এদিকে ধুলোবালি ও ভাঙ্গা সড়কের কারনে কক্সবাজারে আগত পর্যটকরাও অসস্তিতে পড়েছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: শাহিন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ধুলোবালিতে অ্যাজমা এবং সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) হতে পারে। অ্যাজমা ও ব্রঙ্কালাইটিসের প্রকোপ বেশি। হাসপাতালে গত কয়েকদিন ধরে হাঁপানি আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক রোগী বেশি আসছে। এমনিতেই শীতের শুরুতেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। ধুলোবালির সঙ্গে দূষিত কালো ধোঁয়াও রোগব্যাধি বাড়াচ্ছে।’ এতে করে শহরের সড়কের ধুলোবালি কমানো ও সচেতনতা বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

তিনি আরো বলেন, ‘ধুলোবালির কারণে সর্দি, কাশি, অ্যাজমা, অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন রোগে মানুষ আক্রান্ত হবে। ধুলোবালির সঙ্গে গাড়ির কালো ধোঁয়ায় (বিষাক্ত) শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এর মধ্যে অতি কমবয়সী ও বেশি বয়সী লোকজনের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ধুলোবালি থেকে যতই নিজেকে দূরে রাখা যায় ততই নানা রোগব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটন, বার্মিজ মার্কেট
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন