রামগড় প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে একটি মাদ্রাসার ছাত্রীরা আকস্মিকভাবে গণ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অসুস্থ হয়ে পড়া প্রায় ২৯জন ছাত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রামগড় গণিয়াতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসায় ক্লাশ চলাকালে ছাত্রীদের এ গণ অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে। আকস্মিকভাবে ছাত্রীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় পুরো রামগড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। চিকৎসকরা গণ অসুস্থ হয়ে পড়াকে ‘ম্যাস সাইচোজেনিক ইলনেস’ বা গণ মনস্তাত্বিক রোগ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, সকাল ১১টার দিকে দ্বিতীয় ঘন্টা ক্লাস চলাকালে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র মারজান মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে যায়। শিক্ষকরা তাকে অন্য কক্ষে নিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রামে রাখার পর সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। বেলা ১ টার দিকে টিফিনের বিরতী শেষে পুন:রায় ক্লাস শুরু হওয়ার পর আরও দুজন ছাত্রী চিৎকার দিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। এরপরই একইভাবে একেএকে ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। এতে পুরো মাদ্রাসায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আতংকিত হয়ে পড়েন। ছাত্রদের সহযোগিতায় শিক্ষকরা অসুস্থ হয়ে পড়া এসব ছাত্রীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
জানাযায়, মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়া অনেক ছাত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদেরকেও স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। গণহারে অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীদের চিকিৎসা দিতে ডাক্তার ও নার্সরা হিমশিম খেতে হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, হঠাৎ তাদের প্রচন্ড রকম মাথা ব্যথা অনুভব হয়। পরে মাথা ঘুরে চোখে ঝাঁপসা দেখা ও শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট এবং সমস্ত শরীরে খিঁচুনী শুরু হয়।
রামগড় গণিয়াতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম নিজামী বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী মারজান প্রথমে অসুস্থ হলে তার অভিভাবককে খবরটি জানানো হয়। অভিভাবকের পক্ষ থেকে শিক্ষককে জানানো হয় ইতিপূর্বেও মারজানের এমনটা হয়েছে। কিছুক্ষণ বিশ্রামে রাখলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। অভিভাবকের পরামর্শ মত তাকে বিশ্রামে রাখার কিছুক্ষণ সময় পরই সে সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যায়। অধ্যক্ষ আরও বলেন, টিফিনের বিরতীর পর হঠাৎ করে একেএকে অনেক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, বেলা সোয়া একটা থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত ২৯ জন ছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরা হচ্ছে, পঞ্চম শ্রেণীর ইশরাত জাহান, ষষ্ঠ শ্রেণীর আয়েশা বেগম, জান্নাতুল, ফাহিমা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস, সপ্তম শ্রেণীর সুমাইয়া, মরিয়ম, খাদিজা ফারহানা, মাহবুবা আক্তার, নুসরাত জাহান, মরজিনা আক্তার, নাহিদা, মোরশেদা, সাহেদা, রোকেয়া, খাদিজা আক্তার, সালমা আক্তার, অস্টম শ্রেণীর জাকিয়া, আকলিম, শাহেনা, শাহনাজ, স্বপ্না, মরিয়ম, বিবি খোদেজা, নবম শ্রেণীর আকলিমা, তানিশা ও দশম শ্রেণীর সখিনা আক্তার, তাসলিম আক্তার ও শাহেদা আক্তার।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার রতন খীসা ও ডাক্তার ইশরাত জাহান জানান, চিকিৎসাধীন ছাত্রীরা সবাই ভাল আছে। তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবে। আকস্মিকভাবে গণহারে ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে এ চিকিৎসকদ্বয় জানান, এটা ম্যাস সাইচোজেনিক ইলনেছ বা গণ মনস্তাত্বিক রোগ। অনেকটা সংক্রামক ব্যাধির মত এ রোগ একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তরা শতকরা ৯৫ ভাগই মেয়ে। যাদের বয়স ১৩ বছর হতে ১৯ বছর। অর্থাৎ টিন এজার। আক্রান্তদের প্রচন্ড মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, খিঁচুনী ভাব ও শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হবে। এ রোগে আতংকিত হওয়া বা ভয়ের কোন কারণ নেই বলেও চিকিৎকদ্বয় জানান।
এদিকে গণহারে মাদ্রাসার ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়ে রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো: ইকবাল হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ভুইয়া, রামগড় পৌরসভার মেয়র মো: শাহজাহান কাজী রিপন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, থানার অফিসার ইনচার্জ মাইন উদ্দিন খানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে ছুটে যান। তার অসুস্থ ছাত্রীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।