হঠাৎ বগালেক খোলায় বিপাকে পর্যটক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

fec-image

আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ প্রায় তিন বছর পর বান্দরবানের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র বগালেক পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ আগত ভ্রমণপিপাসুদের।

বগালেকে বেড়াতে যাওয়া নানা সমস্যা সম্মুখীন পড়তে হচ্ছে পর্যটকরা। আর আগত পর্যটকদের থাকা থেকে শুরু করে খাবারসহ নানা সুবিধা নিয়েও নানা শঙ্কায় পড়তে হচ্ছে ওই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় আগত পর্যটকদের সুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে সেখানকার স্থানীয়দের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

আর সেখানকার মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার মজুত না থাকায় নানা সমস্যায় পড়েছে। নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ছাড়া খাবার নেয়াও যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সেখানকার স্থানীয় ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে প্রশাসনের দাবি, আইনশৃংখলার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে অল্পসময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বগালেক খুলে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে স্থানীয়দের খাপ খাইতে একটু সমস্যা সম্মুখীন হতে পারে। তবে পর্যায়ক্রমে সেসব এলাকায় সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে প্রশাসন পক্ষ থেকে জানানো হয়।

গেল ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু হলে বগালেকসহ রুমা ও থানচি উপজেলার কিছু এলাকায় পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।

প্রায় ৩৩ মাস পর চলতি বছরে ৬ জুন থেকে বগালেকের ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে বাধে নানা বিপত্তি। আগত পর্যটকদের থাকার ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন অনেকেই।

বগালেকের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন,“ হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে আগত পর্যটকদের। নিষেধাজ্ঞা তোলার আর খোলার বিষয়ে অন্তত এক সপ্তাহ আগে জানানো হলে প্রস্তুতি নেয়া যেতো।

একদিন আগে বগালেক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ে জানানো হলে কোন আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। যার কারণে এখন পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারছেন না। দীর্ঘ বছর বগালেক বন্ধ থাকায় প্রতিটি কটেজ এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

কটেজে ব্যবহৃত কাপড়চোপড় ইঁদুরে কেটে দেয়া নষ্ট হয়ে গেছে আর মুলত সেখানে খাবার বলতে কোন কিছু মজুদ নেই। কটেজে ব্যবহৃত সোলারের ব্যাটারিও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে সেখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আকস্মিকভাবে খুলে দেওয়ার পর বগালেকে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু পর্যটকদের থাকার নিশ্চিত করতে কটেজ, খাবার ও অন্যান্য সুবিধার ঘাটতির কারণে নানা সমস্যায় পড়ছেন।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে তাদের ব্যবহৃত আবাসন, খাবার সরবরাহ ব্যবস্থা ও সোলার ব্যাটারির মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর হঠাৎ করে পর্যটক আসায় তারা সেবা দিতে না পারায় হিমশিম খাচ্ছেন সেখানকার মানুষজন।

বগালেকে দুটি কটেজের মালিক লালটন পোইময় বমের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, বগালেক এলাকায় তার দুটি কটেজ রয়েছে, যেখানে ২২ জন পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০২২ সালের আগে প্রতিজন পর্যটকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া নিতেন, খাওয়া-দাওয়ার বিল আলাদা।

কিন্তু পাহাড়ের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের পর রুমা উপজেলা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিন বছর পর হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। আর বগালেক খোলার বিষয়ে একদিন আগে তাদেরকে জানানো হয়েছিল। আর যদি খোলার বিষয়ে অন্তত এক সপ্তাহ আগে জানানো হতো তাহলে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতেন।

লালটন পোইময় বম আরো বলেন, কটেজগুলো এখন কোথাও ভেঙ্গে গেছে আবার কোথাও নষ্ট হয়ে গেছে। এক কথায় বলা চলে পর্যটক না থাকায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়েছিল। দীর্ঘ বছর বন্ধ থাকায় কাপড়চোপড় ইঁদুরে কেটে দিয়েছে,

খাবার কিছু মজুদ নেই, সোলারের ব্যাটারিও নষ্ট। পর্যটকরা রাত্রীযাপন করতে না পারায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। আর সবকিছু গুছিয়ে নিতে অন্তত এক সপ্তাহের বেশী সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা থেকে ১০ জনের একটি বাইক রাইড টিম নিয়ে আসা পর্যটক হাফিজুর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন পর বগালেক ঘুরতে পেরে ভালো লাগছে। তবে এতদিন পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বগালেকের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

একই কথা জানালেন প্রথমবারের মতো বান্দরবান ভ্রমণে আসা পর্যটক মো. হিমু রায়হান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ খোলায় থাকা-খাওয়ার কিছু সমস্যা হচ্ছে।”

রুমা উপজেলা পর্যটক গাইড সমিতির সহসভাপতি মোঃ বেলাল উদ্দিন জানান, “আমাদের ৭৫ জন নিবন্ধিত গাইড রয়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞার সময় কেউই কাজ পাননি। এখন যদি পর্যটন চালু রাখা হয়, তাহলে আমাদের আয়ের পথ আবার খুলে যাবে।”

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, আইনশৃংখলার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে অল্পসময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বগালেক ও তমাতুঙ্গী পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারনে স্থানীয়দের খাপ খাইতে একটু সমস্যা হবে। পজিটিভ চিন্তা করে সবার সহযোগিতায় স্থানীয়দের আয়রোজগারের ক্ষেত্রে পর্যটকদের পদচারনায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।

জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি আরো বলেন, স্থানীয়দের খাদ্য মজুদ করে রাখার বিষয়ে ইউএনওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার বিষয়ে স্থানীয়দের টুকিটাকি সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন