parbattanews

হিংসা’র আগুনে সাজেকের রিসোর্ট পুড়ে ছাই

‘হিংসা’র আগুনে ‘মেঘের রাজ্য’ খ্যাত সাজেকের অন্যতম আকর্ষণীয় ও ব্যয়বহুল রিসোর্ট ‘রক প্যারাডাইজ’ পুড়ে ছাই হয়েছে ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত ভোররাত তিনটার দিকে সাজেক পর্যটন কেন্দ্রের কংলাক পাহাড়ে অবস্থিত ‘রক প্যারাডাইজ রিসোর্টে’ হঠাৎ করেই আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো রিসোর্টেই। এতে সাজেকের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থিত রিসোর্টটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

নিশ্চিত হওয়া গেছে, আগুন লাগার পরই ‘রক প্যারাডাইজ রিসোর্টে’ অবস্থানরত পর্যটকরা নিরাপদে সরে যেতে পেরেছেন। পর্যটনকেন্দ্র সাজেকে নির্মিত বেশিরভাগ কটেজই পরিবেশবান্ধব ইকো কটেজ, যা মূলত কাঠ-বাঁশ দিয়েই তৈরি।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, ভোর রাত তিনটার সময় আগুন লাগার পর সেনাবাহিনী ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রচণ্ড বাতাস ও উঁচু পাহাড়ে পানির সংকট থাকায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এতে রক প্যারাডাইজ রিসোর্ট পুড়ে পুরোপুরি ছাই হয়ে যায়।

ভোর পাঁচটার দিকে স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর পাহারায় দিঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট পৌঁছার পর এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ নুরনবী গণমাধ্যমকে জানান, আগুনে রক প্যারাডাইজ রিসোর্টটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এতে আনুমানিক এক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে আগুন লাগার ঘটনার পর সাজেক রক প্যারাডাইজ রিসোর্টের মালিক হোসেন মোহাম্মদ ওমর বিজু  জানান, কেরোসিন ছিটিয়ে তার রিসোর্টে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে।

ঘটনার জন্য তিনি টুপিচ ত্রিপুরা নামে রক প্যারাডাইজ রিসোর্টের এক সাবেক কর্মীকে সন্দেহ করছেন। একমাস আগে টুপিচ ত্রিপুরাকে চুরির দায়ে রিসোর্টের চাকরি থেকে ছাঁটাই ও এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি টুপিস ত্রিপুরা এলাকায় ফিরে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এমনটি করেছেন বলে দাবি ওমর বিজুর।সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেরী লুসাই বলেন, বারবার আগুন লাগার বিষয়টি দুঃখজনক।

সাজেক ভ্যালি মূলত দুটি এলাকায় বিভক্ত— রুইলুই পাড়া ও কংলাক পাড়া। এর মধ্যে কংলাক পাড়া এলাকাটি রুইলুই থেকে অন্তত ১০০ ফুট উঁচু। সাজেকের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রিসোর্টগুলোও এই কংলাকে অবস্থিত। সেখানে গাড়ি ওঠার সুযোগ নেই। হেঁটে পাহাড় বেয়ে কংলাকে ঢুকতে হয়।

এর আগে গত ২ ডিসেম্বর ভোরে পর্যটনকেন্দ্র সাজেকে অগ্নিকাণ্ডের আরেক ঘটনায় তিনটি রিসোর্ট–কটেজসহ বসত ঘর, রেস্তোরাঁ পুড়ে যায়। এতে কমপক্ষে দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির নেতারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২ ডিসেম্বর ভোররাত পৌনে চারটার দিকে সাজেকের হেডম্যান বাসভবনের পেছনে অবকাশ ইকোকটেজের দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারতলাবিশিষ্ট ইকোকটেজে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ওই কটেজে অন্তত ৫০ জন পর্যটক ঘুমাচ্ছিলেন। আগুনের খবর পেয়ে পর্যটকেরা কোনোরকমে নিজ নিজ ঘর থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও কোনো কিছু রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

এ সময় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের মেঘছুট রিসোর্ট, সাজেক ইকোভ্যালি রিসোর্ট, মারুতি রেস্টুরেন্ট ও পাশের দুটি বসতঘর  জাকারিয়া দাদার ঘর ও মারুতি দিদির ঘরেও। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

Exit mobile version