হুমকির মুখে দেশের রাবার শিল্প, আমদানি বন্ধের দাবি
বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী রাবার শিল্প নগরী হিসাবে সারা দেশে খ্যাতি লাভ করেছে। স্থানীয়রা রাবারকে বাংলাদেশের সাদা সোনা হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন। বিগত দিনে দেশের মাটিতে সাদা সোনার বিপ্লব ঘটলেও এখন সাদা সোনার দর পতনের কারণে রাবার শিল্প বর্তমানে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
রপ্তানির সুযোগ থাকলেও বেপরোয়াভাবে বিদেশ থেকে রাবার আমদানির ফলে এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন রাবার বাগান মালিকরা সস্তা দরে শিট বিক্রি করায় দেশীয় উৎপাদিত রাবারের বাজার দর কমে গেছে। এর ফলে রাবার চাষিদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ থাকায় যে কোন সময় উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি জেলাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও টাংগাইলের মধুপুরে রাবার বাগান রয়েছে। তবে দেশের সবচাইতে বেশি রাবার চাষ রয়েছে পার্বত্য জেলার বান্দরবানের লামার সরই, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে । এই সরই ও বাইশারী ইউনিয়নকে অনেকেই রাবার শিল্প নগরী হিসাবে খ্যাত বলে মনে করেন। বর্তমানে সরই এলাকায় ১৮ হাজার একর ও বাইশারীতে ১৬ হাজার একরের অধিক পরিমাণ রাবার বাগান রয়েছে ব্যক্তি মালিকানা ও ঘরোয়া বাগান মিলে।
এই বাগানগুলোতে শ্রমিক হিসাবে নিয়োজিত রয়েছেন ১২ হাজারের অধিক লোক। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত বিদেশি রাবার বাংলাদেশে আমদানির ফলে রাবারের দাম একেবারেই নিচে নেমে গেছে বলে জানালেন একাধিক বাগান মালিকেরা।
নাজমা খাতুন রাবার এস্টেটের সিনিয়র ব্যবস্থাপক মো. আল আমিন জানান, বিগত বছরগুলোতে রাবারের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে বাজার দর পতনে প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। আচমকা দর পতনে রাবার মালিকেরা হতাশ হয়ে পড়েছে বলে জানান।
এই অবস্থায় রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের মাসিক বেতন ভাতা পরিশোধ করতে মালিকগণ হিমশিম খাচ্ছে বলে জানালেন নাজমা খাতুন রাবার এস্টেটের মালিক প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার হাসনা ইন আরিফ।
সরেজমিনে ও রাবার বাগান মালিক, শ্রমিক, সুপার ভাইজার ও ব্যবস্থাপকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান অবস্থায় বাজার দর পতনের কারণে উৎপাদিত রাবার বিক্রি করে মাসিক বেতন ভাতা পরিশোধ করার মুশকিল হয়ে পড়েছে।
পিএইচপি ল্যাটেক্স অ্যান্ড রাবার প্রোডাক্ট লিমিটেডের সিনিয়র ব্যবস্থাপক আমিনুল হক আবুল জানান, তার বাগানে বর্তমানে নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। বিগত মাসের উৎপাদিত রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে বাগান মালিকেরা উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারেন। কারণ আয়ের চেয়ে ব্যয় এখন বেশি হয়ে পড়েছে।
অপর দিকে লামা রাবার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন বলেন, বর্তমানে উৎপাদিত রাবার পণ্যও বিক্রি হচ্ছে না। গত মাসের উৎপাদিত রাবার এখনো গুদামে মজুদ রয়েছে। দিন দিন ব্যবসায়ীরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি রাবার সেক্টর বন্ধ হলে শ্রমিকদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করছেন স্থানীয়রা। রাবার সেক্টরের প্রতি সরকারের নজর দিয়ে রাবারের দাম বাড়ানো দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে একাধিক ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, একটি মহল নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশীয় পণ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে বিদেশি পণ্য আমদানি করে বাজার সয়লাভ করেছেন।
অথচ রাবারের দর পতন হলেও রাবার থেকে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর কোন ধরণের দাম কমেনি। বাজারে বর্তমানে রাবার থেকে উৎপাদিত পণ্যের দাম এখনো চড়া। কিন্তু রাবারের দাম কেন এত নিচে পড়ে গেছে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মনে প্রশ্ন জেগেছে। তাই দেশীয় শিল্পকে বাঁচানোর জন্য রাবার বাগান মালিকেরা বর্তমান সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।