হোয়াইক্যং রেঞ্জ কর্মকার্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

fec-image

হোয়াইক্যং রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: আব্দুল মতিন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়াম দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার এহেন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক ও বর্তমান কতিপয় সদস্য। তার অধস্তনদের সমন্বয়হীনতার কারণে তাদের মধ্যে মৌনযুদ্ধ বিরাজ করছে।

খোঁজ খবর ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি যোগদান করেন ১ মার্চ ২০১৯ তারিখে। তখন থেকে তার অফিস ও কার্যক্রম অনিয়ম ও দূর্ণীতির আখড়ায় পরিণত করেন। জবরদখলকারীদের সাথে যোগসাজস করে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অফিসের নীয়ম নীতিও তেমন তোয়াক্কা করেন না ওই কর্মকর্তা। যখন তখন অফিস বন্ধ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। একাধিক কর্মকর্তারা চাইলে তাকে পাওয়া যায়না। তার এ নিরুদ্দেশ বনাঞ্চল উন্নতির চরমভাবে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। বাগানের উন্নয়নমূলক কাজে শ্রমিকদের সম্মানি বা টাকা ঠিকমতো প্রদান করা হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।

তিনি যোগদান করার পরে সমিলের সংখ্যা (চোরাই কাঠ ছিড়ার যন্ত্র) বেড়ে গিয়েছে। অনেক সমিল থেকে মাসোয়ারা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে তৎকালীন এসিল্যান্ড বর্তমান রামু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমার নেতৃত্বে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজারের আশে পাশ থেকে ৪টি অবৈধ সমিল জব্দ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ওই রেঞ্জার সমিলগুলো মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মালিকদের ফেরত দেয়া হয় বলে জানা গেছে।

জনশ্রুতি রয়েছে মামলা থেকে বিরত ও সমিল ফেরত দিয়ে কয়েক লাখ হাতিয়ে নিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জানিয়েছেন, ওই সমিলগুলো জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু সচেতন মহলের প্রশ্ন এখনো ওই সমিল বহাল তবিয়তে থেকে প্রতিদিন হাজার ফুট বনের কাঠ চিড়ানো হচ্ছে। রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির আওতায় একাধিক সিপিজি সদস্য জানান, তিনি যোগদান করার পর থেকে বনের উন্নতির পরিবর্তে অবনতি হয়েছে। সম্প্রতি কেরুনতলী এলাকায় পাহাড় কেটে ৪০ খানির বেশি জমি বের করেছে চিহ্নিত বন খেকোরা। সেই সাথে ‘বড়ছড়া’ নাম খালে বড় বড় দুইটি বিশালাকারে বাঁধ নির্মাণ করে। যা পাহাড়কে চরমভাবে ধ্বংস করে চলছে।

এ ব্যাপারে তড়িত ব্যবস্থা নিতে গিয়ে হোয়াইক্যং বিট অফিস বাঁধের আংশিক কেটে দেয় বলে জানা যায়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে সিপিজির এক সভাপতি জানান, রেঞ্জের আব্দুল মতিন ওই বন খেকোদের সাথে বসে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে অভিযান চালানো হবেনা বলে আশ্বস্থ করেছেন। যা লোকজনের মুখে মুখে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিপিজির একজন সক্রিয় সদস্য মোস্তাক আহমদ বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ স্থাপনাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা বিপরীতে উৎসাহিত করছে রেঞ্জার। তিনি আরো বলেন, বিট কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক আহমদ প্রশাসন ও সিপিজি, সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজনদের সাথে নিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে এই বিট অফিসারকে বদলি করার তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এই রেঞ্জে যোগদান করা মাত্রই তার অফিসের রাস্তাটি একটু আধটু সংস্কার করার পরিবর্তে পুরো রাস্তা নির্মাণ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই সড়কটি নতুনভাবে নির্মাণের কোন প্রয়োজন ছিলনা।
এ ছাড়া তার অফিস ঘেষে এক নতুন ইটভাটা থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ইট ভাটার মালিকদের কার্যক্রমে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বাহারছড়া এলাকায় ক্রসফায়ারে নিহত হাবিব নামের এক ব্যক্তির জমি অন্যজনকে দখল দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তিনি যে সব টাকা নেয় তাদেরকে জানান যে, উপরের মহলকেও টাকার ভাগ দিতে হয়। তিনি বিভিন্ন জায়াগাতে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জনৈক কর্মকর্তা ও এসিএফের রেফারেন্স দিয়ে কথা বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া হোয়াইক্যংয়ে যোগদান করার পূর্বে চকরিয়ায় ফাইস্যাখালীতে দায়িত্বরত অবস্থায় ওই রেঞ্জারের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। যা সচিত্র সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। তাকে হোয়াইক্যং রেঞ্জে এক বছরের মধ্যে শাস্তিমূলক বদলি করে বন বিভাগ। তাছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে তার অনৈতিক কর্মকান্ড রয়েছে বলেও সিপিজির একাধিক সদস্য অকপটে বলেন।

৮ অক্টোবর সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তার অফিস বন্ধ রয়েছে। বেশ ডাকাডাকি করার পরে বিটকর্মী শামীম নামের এক যুবক ঘুম থেকে উঠে জানান, স্যার কক্সবাজারে গিয়েছে। পাশের বিটের বিট কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রাহমান একদল সিপিজি নিয়ে উচ্ছেদে অভিযানে যাচ্ছিলেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্যার ৫ দিন ধরে কোথায় গিয়েছে তার জানা নেই। হোয়াইক্যং রেঞ্জের কর্মকর্তা আব্দুল মতিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অফিসে ফেরার পথে রয়েছি। আপনি বাজারে বসেন, এসে মাত্রই দেখা করছি। ’ এছাড়া তার আর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বেশ কিছুক্ষণ বসেও তার দেখা মিলেনি।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় বনকর্তা হুমায়ূন কবির জানান, এ ব্যাপারে তিনি অবগত ছিলেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ, রেঞ্জ কর্মকার্তার, হোয়াইক্যং
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন