১৫ কোটি টাকার সম্পদ এস আলমের গৃহকর্মীর নামে
এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের চট্টগ্রামের বাসার গৃহকর্মী মর্জিনা আক্তারের ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও জমিসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে আয়কর বিভাগ।
অথচ মর্জিনার কোনো ট্যাক্স ফাইলই পাননি কর্মকর্তারা। ফলে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, নামে-বেনামে অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানেও এস আলমের এ ধরনের সম্পদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মর্জিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে তিন কোটি টাকার এফডিআরের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তার নামে ৫ কোটি টাকার দলিল মূল্যের জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই জমির বর্তমান দাম ১২ কোটি টাকার উপরে হতে পারে।’
মর্জিনার নামে এফডিআর রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম শহরে ইসলামী ব্যাংকের পাঁচলাইশ শাখায়। আর তার নামে নিবন্ধিত জমিও শহরেই অবস্থিত।
ওই কর্মকর্তা ধারণা করেন, সব মিলিয়ে মর্জিনার নামে সম্পদের পরিমাণ ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা হতে পারে। ‘এই টাকা ওই গৃহকর্মীর হওয়ার কথা নয়,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও নিশ্চিত করেন, ‘মর্জিনা আক্তারের কোনো ট্যাক্স ফাইলই নেই।’
মর্জিনা এস আলমের চট্টগ্রাম শহরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বাসভবনে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
ওই এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, ‘মর্জিনার মতো এস আলমসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’
এনবিআরের কর অঞ্চল-১৫ মর্জিনার নামে থাকা এই সম্পদের সন্ধান পেয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে কর অঞ্চল-১৫-র কমিশনার আহসান হাবীব এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। হিসাব চূড়ান্ত করতে আরও কিছু সময় লাগবে।’
তবে ওই কর অফিসের আরেকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, ‘এস আলমের কর ফাঁকির সব তথ্য একা এই কর অঞ্চলের মাধ্যমে উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে এনবিআরের আরও একাধিক অফিস কাজ করছে।’
তিনি জানান, এ পর্যন্ত এস আলম, তার পরিবারের সদস্য এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ৬৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
গত পাঁচ বছরে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নামে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ঋণের পরিমাণ কত, সেই হিসাব এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি ট্যাক্স অফিসটি।
তবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।’
গত ১৪ আগস্ট কর অঞ্চল-১৫ থেকে ৯১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এস আলম, তার পরিবার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে।এর এক মাস পর এই হিসাবগুলোতে বড় অঙ্কের লেনদেনের তথ্য প্রকাশ্যে এল।