parbattanews

দুই দিনেও অপহৃত পাহাড়ী নারীদের খোঁজ মেলেনি: নীরব মানবাধিকার ও নারী অধিকার নেত্রীবৃন্দ

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি ॥

গত ১৮ মার্চ রাঙামাটিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) দুই গ্রুপের মধ্যে সংর্ঘষে একজন গুলিবিদ্ধ এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দয়া সোনা চাকমাকে অস্ত্রের মুখে গুম করা করে তাদের বিরোধী পক্ষ।

গুমের ঘটনার দু’দিন পার হলেও এখনো ওই দুই নেত্রীকে উদ্ধার করা যায়নি। তারা বেচেঁ আছে নাকি মরে গেছে কেউ এখনও কেউ জানে না। সামাজিক গণমাধ্যমে তাদের সাথে অপহরণকারীদের রাত কাটানোর পোস্ট দেয়া হচ্ছে। নির্যাতনের কথা বলা হচ্ছে। কোনো কোনো পোস্টে বলা হচ্ছে, অপহৃতরা ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) ত্যাগ করতে রাজী হয়েছেন। তাদেরকে অপহরণকারী গ্রুপের সদস্যদের সাথে বিবাহ দেয়া হবে। ফেসবুকে সে বিয়ের দাওয়াত দেয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) প্রতিবাদে বুধবার রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় হরতাল ডেকেছে। ইউপিডিএফ মূল দল এ ঘটনার জন্য তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গণতান্ত্রিক গ্রুপকে দায়ী করে আসছে।

এদিকে অপহরণ ঘটনার দু’দিন পার হলেও জাতীয় ও পাহাড়ী মানবাধিকার এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এখনো কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে না। নীরব রয়েছে মানবাধিকার, সামাজিক ও নারী অধিকারের নামে সোচ্চার সংগঠনগুলো নেত্রীবৃন্দ। মাত্র মাস দুয়ের আগেও একই জেলার বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনের উপর কল্পিত ধর্ষণের অভিযোগে যেসব সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবকেরা সোচ্চার হয়েছিলেন, ঢাকা থেকে রাঙামাটি ছুটে গিয়েছিলেন, ঢাকায় প্রেস কনফারেন্স ও মানববন্ধন করেছিলেন এ ঘটনায় তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এজন্য অনেকে ঠাট্টা করে বলছে, পাহাড়ের মানবাধিকার সংগঠন নামের কোন সংগঠন আছে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে নাম সর্বস্ব যে সংগঠনগুলো আছে তাদের কাজ হচ্ছে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে বিশেষ বিশেষ ঘটনার মনগড়া ব্যাখ্যা করে অন্যের ইন্ধনে তাদের স্বার্থ হাসিল করা।

পিছনে ফিরে দেখা যাক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাজ

২০১৭ সালের শেষের দিকে রাঙামাটি জেলা মহিলা লীগের নেত্রী ঝর্ণা খীসাকে সন্ত্রাসী কর্তৃক তার বাড়িতে গিয়ে কুপিয়ে জখম, জুরাছড়িতে সন্ত্রাসী কর্তৃক উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি অরবিন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যা, বিলাইছড়িতে সন্ত্রাসী কর্তৃক রাসেল মার্মাকে কুপিয়ে জখমসহ পাহাড়ে অনেকগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু পাহাড়ের মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিশ্চুপ ছিলো। মাটিরাঙ্গায় গৃহবধু ফাতেমাকে বাস থেকে তার স্বামীর পাস থেকে তুলে নিয়ে গেলেও অদ্যাবধি তার কোনো খোঁজ মেলেনি। এসব ঘটনায় তাদের কোন কার্যক্রমই চোখে পড়েনি।

অথচ ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে দুই মারমা তরুণীর কথিত ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের মানবাধিকার সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলা থেকে শুরু করে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক রায়কে এ সংগঠনগুলো অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে।

কথিত ধর্ষিত দুই তরুণীকে যখন তার মা-বাবা নিজেদের জিম্মায় নেওয়ার জন্য আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলার রায়ও তারা পেয়ে যায়। কিন্তু এ রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে কিছুদিনের মধ্যে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে সুলতানা কামাল একটি মামলা দায়ের করে।

তাই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে পাহাড়ে একাধিক মানুষ খুন, গুম, জখম হচ্ছে, সেখানে তথা কথিত মানবাধিকার নেত্রীদের টনক নড়ছে না কিন্তু বিলাইছড়ির দুই তরুণীর কথিত ধর্ষণ নিয়ে এতো মাতামাতি কেন? তাদের প্রশ্ন, তাহলে মানবাধিকার নেত্রীরা কি কারো কারো পকেটের নির্দেশে চলছে? কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে ?

চাকমা সার্কেল চিফের স্ত্রী য়েন য়েনের ভূমিকা:

একের পর এক পাহাড়ে খুন, গুম বেড়েই চলেছে। শান্তির পাহাড় অশান্ত হচ্ছে দিনদিন। আর এ অশান্তির পেছনে চাকমা সার্কেল চিফের স্ত্রী য়েন য়েনের রয়েছে রহস্যময় ভূমিকা। কোনো কোনো ঘটনায় তিনি নীরবতা অবলম্বন করলেও কোনো কোনো ঘটনায় রহস্যজনক অতি উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তার এই পিক এন্ড চুজের প্রকৃতিতে পাহাড়ের মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

পাহাড়ে পাহাড়ী সংগঠনগুলো কর্তৃক প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় চাকমা সার্কেল চিফ ও তার স্ত্রী নীরবতা পালন করে থাকেন। কিন্তু তাদের সক্রিয়তা দেখা যায় কেবল লংগদু ও বিলাইছড়ির ঘটনায়।

চাকমা সার্কেল চিফের স্ত্রী বিলাইছড়িতে কথিত ধর্ষিত দুই কিশোরীকে নিয়ে তিনি নানা তালবাহানা করে। প্রশাসনের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, আইনের বিধি-নিষেধ অমান্য এবং রাঙামাটি জেনারেল হাসপতালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থান, কথিত ধর্ষিতা দুই বোনকে তাদের পিতা মাতার পরিবর্তে নিজেদের হেফাজতে নেয়ার নামে নানা নাটকের জন্ম দিয়েছে।

এছাড়াও মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত ফেইসবুকে সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা লিখেছেন। অথচ রাঙামাটি সদর থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুই নারী নেত্রী গুম হওয়ার দু’দিন পার হয়ে গেলেও তাদের উদ্ধারে য়েন যেনের কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না দেখে ক্ষুদ্র জাতি স্বত্তার মানুষেরাও এবার বিতর্কের তীর ছুড়েছেন তার দিকে।

তাদের অভিমত, য়েন য়েন যদি দূর্গম বিলাইছড়ির দুই তরুণীর জন্য আন্দোলন করতে পারেন অথচ আমাদের জনগোষ্ঠীর দুই নারী দু’দিন ধরে গুম হয়েছে, তাদের উদ্ধারে রাণীর কোন সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না কেন?

সুশীল সমাজের অভিমত

পাহাড় নিয়ে, পাহাড়ের রাজনীতি নিয়ে যারা দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন তাদের সাথে কথা হয় এ বিষয় নিয়ে। তারা বলেন, পাহাড়ে প্রকৃত মানবাধিকার নিয়ে কাজ নিরপেক্ষ কোন সংগঠন নেই। নাম সর্বস্ব যেগুলো আছে, সেগুলো কোন বিশেষ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ-সিদ্ধি হাসিলের জন্য কাজ করে।

বিদেশী প্রভুদের সাথে আঁতাত করে পার্বত্যাঞ্চলে অরাজকতা সৃষ্টি করাই হচ্ছে তাদের কাজ। মানবাধিকার কর্মকাণ্ড পরিচালনার নামে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা পার্বত্যাঞ্চল নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

এ বিষয় নিয়ে কথা হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমার সাথে। তিনি জানান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নারী গুমের বিষয়টা একটা রাজনৈতিক ঘটনা। রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকবেলা করবে।

মানবাধিকার কমিশনের এ সদস্য বলেন, রাষ্ট্রের দ্বারা করো মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হলে বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করি। যেহেতু এ ঘটনা রাজনৈতিক, সেটা রাজনৈতিকভাবে এ সমস্যার সমাধান করা হোক। তবে রাজনৈতিক স্বার্থে কাউকে গুম করা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এ সদস্য।

Exit mobile version