parbattanews

২৭ হিন্দু রোহিঙ্গাকে কৌশলে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে গেছে মিয়ানমার


ডেস্ক প্রতিবেদন:
রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৭ নাগরিককে কৌশলে মিয়ানমার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজারে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে ব্যাপক হট্টগোল হয়েছে।

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন বক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভায় উখিয়ার কুতুপালংয়ের একটি খামারে আশ্রিত অবশিষ্ট ৪৯৬ জন হিন্দু রোহিঙ্গাকে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য কপবাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন বলেন, গত ২৫ আগস্টের সহিংস ঘটনার পর মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসে ৫২৩ জন হিন্দু রোহিঙ্গা। তাদের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং পশ্চিম হিন্দুপাড়ার একটি পরিত্যক্ত মুরগির খামারে রাখা হয়। তিনি জানান, তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণসামগ্রীও দেওয়া হয়। তবে দুর্গাপূজার সময় ওই হিন্দু পরিবারের ২৭ জন পূজা দেখতে যাওয়ার কথা বলে অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে বের হন। তারা আর ক্যাম্পে ফিরে আসেননি।

প্রিয়তোষ শর্মা বলেন, মিয়ানমার সরকার এই ২৭ হিন্দুকে ফুসলিয়ে এখান থেকে নিয়ে গেছে। তাদের দিয়ে এখন সরকারি নিরাপত্তায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। তাদের দিয়ে বলানো হচ্ছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা হয়নি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়া হিন্দুদের ব্যবহার করে মিয়ানমার সরকার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতিতে এখানে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গার ফিরে যাওয়ার পথ কঠিন হচ্ছে। এখানে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। এখানে গুপ্তচর পাঠিয়ে আশ্রিত ২৭ হিন্দুকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ছোট করে দেখলে হবে না। এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্যও চরম হুমকি।

পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া হিন্দু রোহিঙ্গাদের সার্বক্ষণিক বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এরপরও গোপনে তাদের কিছু লোক মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সভায় সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, এখানে আশ্রয় নেওয়া অবশিষ্ট ৪৯৬ হিন্দু রোহিঙ্গাকে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে তাদের বিশেষ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার স্বপন শর্মা রনি এখানে আশ্রয় নেওয়া হিন্দুদের দেখভাল করছেন। তিনি বলেন, তাদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে জেনেছি, ফুসলিয়ে তাদের সীমান্ত পার করে হেলিকপ্টারে তুলে নিয়ে গেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

সভায় মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু পরিবারের একজন মিলন কুমার মল্ল্লিক বলেন, আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের লোকজন চেষ্টা চালাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। দুর্গাপূজার সময় কিছু হিন্দু মিয়ানমারের ওপারে চলে গেছে। আমরা পরে বুঝতে পেরেছি। ওপারে চলে যাওয়া হিন্দুরা মিয়ানমারের সেনাদের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক করেই গেছে।

কুতুপালং হিন্দুপল্লীতে আশ্রয় নেওয়া রূপপতি রুদ্র বলেন, শুনেছি যারা ফিরে গেছে, মিয়ানমার সরকারের লোকজন তাদের হেলিকপ্টারে করে মংডু শহরে নিয়ে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে।

সূত্র: সমকাল

Exit mobile version