৩৫ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি যে পাড়ায়
সারা বাংলাদেশে সরকারের উন্নয়নের জোয়ার বইলেও বান্দরবান রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের তুলাছড়ি এলাকার শুকনা ঝিরি পাড়াটিতে ৩৫ বছরের মধ্যে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়াতো দুূরের কথা, সেখানে দৃষ্টি পর্যন্ত পড়েনি সরকারের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোয়াংছড়ি সদর থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে হলেও পাহাড়ী ঝিরি পথ বেয়ে পায়ে হেটে যেতে হয় এ তুলাছড়ি এলাকার শুকনা ঝিরি পাড়ায়। বিকল্প একটি পাহাড়ী মাটি পথ থাকলেও বর্ষাকালে এ পথটিও থাকে কাদায় পরিপূর্ণ। আর ঝিরি পথটিও পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় বর্ষাকালে তারা প্রায় বন্দি অবস্থায়ই থাকে। প্রায় ৩৫ বছর আগে মাত্র ১০ পরিবার নিয়ে শুরু হয় এ পাড়াটির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এ পাড়াটিতে রয়েছে ২৮টি পরিবারে বসবাস।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোয়াংছড়ি সদরের তুলাছড়ি এলাকা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পাহাড়ী ঝিরির পথ বেঁয়ে অথবা পাহাড়ী মাটির ঢালু পথ বেঁয়ে যেতে হয় শুকনা ঝিরি পাড়ায়। প্রায় ৩৫বছর বয়সী এ পাড়ার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা চলে জুমের চাষের ফসলে। আর অবসর সময় কাটে তাঁতের কাপড় বুনে। অধিকাংশ ঘরবাড়িগুলোরই ঝরাজীর্ণ অবস্থা। অধিকাংশ পরিবারের সংসার চলছে কোন রকমে। অনেকে অর্থের অভাবে লেখাপড়া করার ইচ্ছে থাকার পরও করতে পারছেনা। সদর থেকে এত কাছে অথচ এ পাড়াটিতে কোন কালেই লাগেনি সরকারী উন্নয়নের বিন্দুমাত্র উন্নয়নের ছোঁয়া।
শুধু সরকারীই নয়, বেসরকারীর কোন সংস্থার সহায়তাও পায়নি তারা। ঘরবাড়িগুলো ঝরাজীর্ণ হবার হলেও এবং সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ হবার পরও পায়নি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কথা থাকলেও এ পাড়ায় বিদ্যুৎ না থাকার পরও পায়নি সৌর বিদ্যুতের সুবিধা। এমনকি মোবাইল নেটওয়ার্কও পায়নি এ পাড়ার মানুষ। যাতায়াতের পাহাড়ী ঝিরি পথেই তাদের চলাচল। একটি মাটির পথ থাকলেও বর্ষাকালে এটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে উঠে।
এ বিষয়ে পাড়ার চিগুন্যা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, সরকারের নানা উন্নয়নের কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু আমাদের পাড়ায় কখনো সরকারী কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সরকারের কাছে কয়েকবার চলাচলের রাস্তার আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাইনি। আমাদের ঘরবাড়িগুলো ভেঙ্গে যাবার পরও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাইনি। এমনকি রাতের আধারে নিজবাড়ি ও পাড়া আলোকিত করতে বিদ্যুৎতো দুরের কথা সোলার পর্যন্ত কপালে জোটেনি। মোবাইল নেট ও ইন্টারনেট না থাকায় আমাদের অভাবের কথা কাউকে জানাতে পারিনা।
এ বিষয়ে পাড়ার তরুনী সুলপনা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে ইন্টার পাশ করেছি। ডিগ্রিতে ভর্তি হতে পারিনি পরিবারের আয়ের অভাবে। বাবা অসুস্থ্য। একমাত্র বড় ভাই ও আমি দুজনেই বেকার অবস্থায় আছি। পরিবারের চলতে কষ্ট হয়। একমাত্র বাড়িটিও মেরামত করতে পারছিনা।
পাড়া কারবারী শাসনমনি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমরা অনেক জায়গায় রাস্তা, প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি পাবার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু পাড়াটি এমনই অবহেলিত যে, সরকারের উন্নয়নের বিন্দু মাত্রও ছোঁয়া পড়েনি এ পাড়াটিতে। এ পাড়ার সবাই অতিনিম্ন আয়ের হবার পরও দেখার যেন কেউ নেই।
রোয়াংছড়ির সদর ইউপি চেয়ারম্যান মেহ্লা অং বলেন, আমি মাত্র নতুন চেয়ারম্যান হয়েছি। আগে কে কি করেছে তা আমি জানিনা। তবে আমি অবশ্যই শুকনাঝিরি পাড়াটি নজরে রেখেছি। উন্নয়নের জন্য যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু আমি করব। এ বিষয়ে আমি মেম্বারকেও বলেছি।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররা আমাদের এ বিষয়ে কখনো অবহিত করেনি। শুকনা ঝিরি পাড়াটি রোয়াংছড়ি সদরে হবার পরও কোন সরকারী সহযোগিতা পায়নি। আমি যেহেতু জানলাম অবশ্যই সরকারী যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব হয় তার সবটুকুই করা হবে।