parbattanews

মহালছড়িতে ৩ মারমা তরুণীকে ধর্ষণ: ৪ উপজাতীয় যুবক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি/মহালছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে একইসঙ্গে দশম শ্রেণির তিন মারমা ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে এবং পুলিশ মারমা ও চাকমা সম্প্রদায়ের ৪ যুবককে গ্রেফতার করেছে। ধর্ষিতাদের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও ধর্ষিতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৯ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহালছড়ি উপজেলার মাইচছড়ির মানিকছড়ি মুখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তিন বান্ধবী বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় চার যুবক থুইচিং মারমা, সাটিং মারমা, হৃদয় চাকমা ও সাইফুল মারমা তিন ছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী সেগুন বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষিতা তিন মারমা তরুণীর মধ্যে দুজনের পিতা মহালছড়ির পথাপাড়ার মংশানু মারমা (৪৫) এবং খ্রাসিং অং মারমা থানায় উপস্থিত হয়ে ওই চার ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ভিকটিমগণ সকলেই দশম শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনার দিন (২৯ মে) সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে মাইসছড়ি ইউনিয়নাধীন মানিকছড়ি মুখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মাঠে বসে মহালছড়ির থঅংপ্রু (২০) নামের তাদের পরিচিতের সঙ্গে গল্প করছিলো। এ সময় এজাহারনামীয় আসামিরা এসে বলে, ‘তুরা এখানে বসে কি করিস’? অতঃপর থঅংপ্রুকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঠিয়ে দেয়।

এরপর সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটের সময় তিন ভিকটিমকে আসামি থুইচিং মং মারমার সহায়তায় অন্যান্য আসামিরা জোরপূর্বক মুখ চেপে ধরে মানিকছড়ি মুখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনের সেগুন বাগানে নিয়ে যায়। অতঃপর ভিকটিম নেইম্রাউ মারমাকে আসামি সাইফুল মারমা, পাইসানু মারমাকে সাচিং মারমা এবং ভিকটিম উক্রাচিং মারমাকে আসামি হৃদয় চাকমা মুখ চেপে ধরে সেগুন বাগানের ভিতরে তিন ভিকটিমকে কাছাকাছি তিন জায়গায় নিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটিতে শুইয়ে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিহিত কাপড় খুলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় ওপর আসামি থুইচিং মং মারমা তাদেরকে সহায়তা করে।

এক পর্যায়ে ভিকটিম নেইম্রাউ মারমা কৌশলে পালিয়ে দৌড়ে বাড়িতে চলে আশে এবং আমার (মংশানু মারমা) কাছে ঘটনার কথা বলে। বাকি দুজন ভিকটিম এবং আসামিরা ওই বাগানের ভিতর আছে বলে জানায়।

এই সংবাদ শুনে আমি, সঙ্গীয় আমার ভাই থৈলাপ্রু মারমা এবং খ্রাসিং অং মারমাসহ গ্রামের লোকজন নিয়ে সেগুন বাগানে পৌঁছলে আমাদের দেখে আসামিরা পালিয়ে যায় এবং ভিকটিমদের বাগান থেকে উদ্ধার করি। ভিকটিমগণ উপস্থিত লোকজনের সামনে ঘটনার কথা আমাদের কাছে খুলে বলে। তৎক্ষণাৎ আমরা লোকজনের সহায়তায় আসামিদের অনেক খোঁজাখুঁজি করি কিন্তু আসামিরা পলাতক হওয়ায় তাদের খুঁজে পাইনি।

এই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য অংসিনু মারমাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে জানাই। তারা জানায় আসামিরা ভয়ংকর, তারা এ বিষয়ে কিছুই করতে পারবে না। অতঃপর আমরা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে জানিয়ে এবং তিন ভিকটিমের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।

মহালছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম ফকির জানান, ধর্ষিতারা স্থানীয় দুটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। প্রচণ্ড গরমে তিন বান্ধবী মানিকছড়ি মুখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসেছিল। এ সময় একই সম্প্রদায়ের চার যুবক তাদের তুলে নিয়ে যায় এবং তিনজন ধর্ষণ করে, অপর যুবক পাহারা দেয়। এক ধর্ষিতা পালিয়ে এসে গ্রামবাসীকে জানায়। খবর পেয়ে গ্রামবাসী লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায় এবং অপর দুই ধর্ষিতাকে উদ্ধার কর হয়।

ওসি নুরে আলম আরও জানান, এক ধর্ষিতার পিতা থানায় মামলা করলে পুলিশ রাত ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে ধর্ষকদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- স্থানীয় পচাই কারবারি পাড়ার উথাই মারামার ছেলে সাইফুল মারমা (২০), একই এলাকার সুইলা প্রু মারমার ছেলে সাচিং মারমা (২০), মানিকছড়ি মুখ চেয়ারম্যান পাড়ার মক্কা ফ্যাদা চাকমার ছেলে হৃদয় চাকমা (২০) এবং একই এলাকার খিলু অং মারমার ছেলে থুইচিং মং মারমা (২০)।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে এবং ধর্ষিতা তিন ছাত্রীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে একইসঙ্গে তিন মারমা ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় পার্বত্য খাগড়াছড়ি এলাকায় তোলপাড় চলছে।

Exit mobile version