parbattanews

৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি, সোনাইছড়িতে ব্যাপক অনিয়ম

নন্নাকাটায় কর্মসৃজন প্রকল্প নিয়ে পানি লাইনের কাজ করছে শ্রমিকরা।

৩নং ওয়ার্ড: প্রকল্প এলাকায় প্রকল্প সংক্রান্ত কোন সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়নি। নির্দিষ্ট প্রকল্প না পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনাইছড়ি মেইন রোড থেকে লামার পাড়া ও নন্নাকাটা ঘনবসতির ভিতর কিছু শ্রমিক কাজ করছে। কিন্ত লামারপাড়া সড়কে গিয়ে দেখা যায় কাজে কোন শ্রমিক নাই। চারদিকে শুনসান নিরবতা।

এই প্রতিবেদক প্রকল্পের ছবি তোলছেন দেখে পাড়ার ভিতর থেকে হাতে কোদাল নিয়ে দুই যুবক এগিয়ে এলেন। পরিচয়ের পর জানা গেলো তারা কর্মসৃজন কর্মসূচীর কাজে নিয়োজিত শ্রমিক। এসময় ওই দুই শ্রমিক অন্যান্যদের কাজে আসতে বলেন। শ্রমিকরা জানান তারা ১০জন গ্রামের রাস্তা মেরামত কাজ করছেন। অন্যশ্রমিকরা নন্নাকাটায় পানির লাইনের কাজ করছে।

এই সূত্র ধরে সকাল ১১টায় নন্নাকাটা গ্রামের ভিতর প্রবেশপথেই বেশ কয়েকজন শ্রমিক বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। তবে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতি দেখে কয়েকজন শ্রমিক পুনরায় কাজে যোগদেন। এসময় ওই কাজে শ্রমিকদের পক্ষে তদারকি করা মাঝি আবুল কাশেম জানান- গ্রামে পানি সংকট নিরসনের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচীর ১৮ শ্রমিক পানি লাইনের কাজ করছে। এরমধ্যে কয়েকজন দুপুরে খাবার খেতে গেছে। উপজেলা অফিসের লোকজন এই কাজ তদারকি করেন বলে জানান তিনি।

অন্য ওয়ার্ডে গেলে শ্রমিক নামধারী লোকজনও চলে যায়। কিছুক্ষণ পর পুনরায় ওই প্রকল্পের কাজের স্থানে পৌঁছে কোনো শ্রমিক দেখতে পাওয়া যায়না। পিআইও দপ্তরের সহযোগিতায় এই অনিয়ম দুর্নীতির জন্য স্থানীয়রা ইউপি মেম্বার আবদুর রহিমকে দায়ী করেছেন।

সকাল সাড়ে ১১টায় একই ভাবে ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড পরিদর্শনে কর্মসৃজন কর্মসূচীর কাজ করা অবস্থায় কোন শ্রমিক দেখা যায়নি। তবে প্রধান সড়কের উপর ২-৩জন শ্রমিকসহ অপেক্ষমান ইউপি মেম্বার আব্দুল হাকিম জানান- পাশের গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থাকায় শ্রমিকদের একটু তারাতারি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন মেইন রোড থেকে সিরাজ মিয়ার বাড়ি ও মেইন রোড় থেকে জসিমের বাড়ির রাস্তা মেরামতের কাজ করছিলেন শ্রমিকরা।

একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে ৪০দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর প্রকল্প রেজু নতুন পাড়া স্টেশন থেকে পাগলী মৌজা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে সকালে কিছু শ্রমিক কাজ করেছে বলে স্থানীয়রা জানান।

জানা গেছে, শ্রমিকদের প্রতিদিন ৮ ঘণ্টায় জনপ্রতি ১৭৫ টাকা করে দেয়ার কথা। ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী তালিকাভুক্ত শ্রমিক ছাড়া কেউ ওই প্রকল্পে কাজ করতে পারে না। কিন্তু সোনাইছড়িতে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের খামখেয়ালীপনায় সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বাহান মারমা ও মেম্বারদের যোগসাজশে সরকার প্রবর্তিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের চেকবই প্রকল্পের সিপিসিরা নিজেদের হেফাজতে রেখে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নিজেরা স্বাক্ষর করে শ্রমিকদের টাকা উত্তোলন করে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। চেক বই বিষয়ে অধিকাংশ শ্রমিক জানেন না ব্যাংকে তাদের একাউন্ট হয়েছে কিনা।

স্থানীয় একাধিক শ্রমিকরা জানান, প্রকল্পের কাজে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের জব কার্ড দেখে মজুরি দেয়া হলে এসব অনিয়ম বন্ধ হবে। বিগত বছরগুলোতেও শ্রমিকদের বঞ্চিত করে প্রকল্প কর্মকর্তা, সিপিসি ও ব্যাংক কর্মকর্তারা কর্মসৃজন কর্মসূচির টাকা লুটপাট করেছেন। এ বছরও একইভাবে হতদরিদ্রদের বঞ্চিত করে টাকা লুটপাট করতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মজনুর রহমান জানান- গত কয়েকদিন আগে আমি এই কর্মস্থলে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে যোগদান করেছি। সোনাইছড়ির অভিযুক্ত প্রকল্পগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, কর্মসৃজনের কাজ অবশ্যয় ১২টা পর্যন্ত করতে হবে। আর প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড না টাঙ্গানো এবং কাজে অনিয়মের বিষয়ে পিআইও’র সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Exit mobile version