৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট

fec-image

জাতীয় সংসদে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা; যা মোট জিডিপির প্রায় ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ (বাজেট) অধিবেশনে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা প্রত্যাবর্তনের’ শীর্ষক বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী।

বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হলে অর্থমন্ত্রী আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলে স্পিকার অনুমতি দেন। এর পরেই অর্থমন্ত্রী পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন।

এর আগে জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভা কক্ষে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বাজেট সংসদে উপস্থাপনের অনুমতি দিয়ে তাতে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। এরপরই অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংসদ সদস্যরা করতালি ও টেবিল চাপরিয়ে তাদের স্বাগত জানান।

সরকারের এই বাজেট প্রস্তাবনায় রয়েছে, বিশ্বময় করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নবিভোর পরিকল্পনা; রয়েছে বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের অর্থনীতির মহাপরিকল্পনা; বাজেট প্রস্তাবনায় রয়েছে করোনাসহ নানাবিধ কারণে কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পরিকল্পনাও। তাই এবারও বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তার বলয়। সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তার, বাড়ছে কৃষিখাতের ভর্তুকি। জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থমন্ত্রীর ১৭২ পাতার বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, করোনার কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। জমানো পুঁজি ভেঙে খেয়েছে সাধারণ মানুষ। মোট কথা, বিশ্বময় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার পরেও সকল সংকট মোকাবিলা করে দেশের জিডিপি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এতোকিছুর পরও বেড়েছে মানুষের মাথাপিছু গড় আয়। এগুলো নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। এই সমৃদ্ধিকে পুঁজি করে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে। এ জন্য বাজেটে দিক নির্দেশনা রয়েছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে চলতি অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেটেও করপোরেট করে গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রীর ভাষায় এবারের বাজেট হচ্ছে, ‘সাধারণ মানুষের জন্য, বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য; সকল বাধা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট’।

জানা গেছে, এবারের বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি চতুর্থ বাজেট, বাংলাদেশের জন্য এটি হবে ৫২তম বাজেট। পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০তম বাজেট হলেও ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সরকারের টানা ১৪তম বাজেট। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শাহ্ এ এসএম কিবরিয়া ৬টি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।

আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। নতুন বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা পাচ্ছে। এটি জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৯ দশমিক ৫ শতাংশ)। সে হিসাবে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। শতকরা হিসাবে তা ১২ শতাংশ।

আগামী বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ দুই খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৬ হাজার কোটি ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে নতুন বাজেটে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ ও ৫ শতাংশ।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন