রামগড় প্রতিনিধি:
প্রিয়তমা স্ত্রীর এবং নিজের হাতের বিয়ের মেহেদির রঙ ম্লান হওয়ার আগেই ১৯৭১ এর ২৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাক হানাদার ও তাদের সহযোগী মিজোরদের সাথে প্রচণ্ড সন্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তরুণ বীরসেনা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীরোত্তম।
এ বীর শহীদের ৪৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রামগড়স্থ শহীদ ক্যাপ্টেন কাদের বিদ্যানিকেতনে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
২ এপ্রিল সীমান্তবর্তী মহকুমা শহর রামগড়ে এসে স্থানীয় স্বাধীনতাকামী যুব ও তরুণদের গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। রামগড়কে শত্রুমুক্ত রাখতে তার নেতৃত্বে সর্বপ্রথম এক সফল অপারেশনের মাধ্যমে ধুমঘাট রেলওয়ে ব্রিজ ধ্বংস করা হয়। এমনিভাবে রামগড় ও এর আশেপাশের এলাকায় বহু প্রতিরোধযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তিনি।
২৭ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে মহালছড়িতে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধরা শত্রু আক্রান্ত হয়। পাকিস্তানি ও তাদের সহযোগী মিজোবাহিনীর শত্রুরা ছিল দলে ভারী। তাদের দলে ছিল পাক সৈন্যদের একটি নিয়মিত কমান্ডো কম্পানি, আর ছিল দুই ব্রিগেডে ১৫০০ মিজো সৈন্য।
যা মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার চেয়ে দু’তিন গুণ বেশি। এছাড়া বিমান থেকেও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য ঘাঁটি লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলাও চালায় পাকবাহিনী। এক দিকে দু’তিন গুণ বেশি শত্রু সৈন্য, অন্যদিকে পার্বত্য এলাকায় ছিল না কোন পূর্বযুদ্ধ ট্রেনিং। তবুও অসীম সাহসিকতা নিয়ে বীরযোদ্ধারা লড়াই চালিয়ে যান।
এ সময় ক্যাপ্টেন কাদের ছিলেন রাঙ্গামাটি রেকিতে। রেকি শেষে মেজর শওকতের প্ল্যান অনুযায়ী ক্যাপ্টেন কাদের যোগ দেন মহালছড়ির এ অসম তুমুল যুদ্ধে। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এ অকুতোভয় তরুণ বীরযোদ্ধার সাহস ও সন্মিলিত প্রতিরোধে মিজোবাহিনী প্রথম অবস্থায় পিছু হটতে শুরু করে। এতে পাক সৈন্যরা পিছন থেকে অস্ত্র ঠেঁকিয়ে তাদের সামনে অগ্রসর হতে বাধ্য করতো।
এ অবস্থায় মিজোরা হিংস্র হয়ে উঠে। প্রায় চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রচণ্ড যুদ্ধের এক পর্যায়ে শত্রুদের মেশিনগানের একটি গুলি এসে বিঁধে যুদ্ধরত অসীম সাহসি বীর তরুণ ক্যাপ্টেন কাদের’র বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এসময় সহযোদ্ধা শওকত আলী ও ফজলুর রহমান ফারুক আহত কাদেরকে উদ্ধার করে রামগড়ে নিয়ে আসার পথে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
২৮ এপ্রিল ভোরে রামগড় কবরস্তানে পূর্ণ সামরিক ও ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় তাকে। সেদিন নিজের প্রাণের বিনিময়ে প্রায় ২০০ মুক্তিসেনার জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন তিনি। এ বীর মুক্তিযোদ্ধার অতুলনীয় বীরত্বকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করেন তাকে।