৯-১১ জুন ডাকা সমঅধিকারের হরতালে সমর্থন জানিয়েছে বিভিন্ন বাঙালী সংগঠন
আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
বর্তমান সরকারের মন্ত্রী সভায় চুড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন খসড়া সংশোধনী- ২০১৩ কে বিতর্কিত উল্লেখ করে উক্ত আইন বাতিলের দাবিতে অতিসম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আর্কষনের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু তারপরও বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ গ্রহণ না করার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত আগামী ৯- ১১ জুন টানা ৭২ ঘন্টার হরতালের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে আবারো সক্রিয় হতে চলেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত বাঙ্গালী সংগঠনগুলো।
টানা ৭২ঘন্টার হরতালে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি স্ব স্ব সংগঠনের নেতাকর্মীদের হরতালে সরব উপস্থিতির ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে হরতাল পূর্ববর্তী সময়ে সভাসমাবেশ ও মিছিলের ঘোষণাও দিয়েছে বাঙ্গালী সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পাঠানো প্রেস বার্তায় এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পার্বত্যাঞ্চলকে নিয়ে উপজাতীয় নেতাদের কল্পিত “স্বাধীন জুমল্যান্ড” বানানোর নীলনক্সা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের দাবী অনুযায়ী পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধিত আইন ২০১৩ইং মন্ত্রী পরিষদে চূড়ান্ত অনুমোদন পার্বত্য বাঙ্গালীর ভূমি হরণ ও রাষ্ট্রের অখন্ডতা নষ্টের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। উক্ত সংশোধিত আইন বাস্তবায়িত হলে ভূমি কমিশনের কোরাম ভিত্তিক রায়, পার্বত্য বাঙ্গালীদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করবে এবং রাষ্ট্রীয় ভূমি হুমকির মুখে পড়বে। উক্ত আইন কার্যকর হলে পার্বত্য ভূমি কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠি ভূমির অধিকার হারাবে। ফলে এতদাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও ঝুকিপূর্ণ হবে এবং রাষ্ট্রের অখন্ডতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে সংগঠনটি রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী, সংবিধান পরিপন্থি পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধিত আইন ২০১৩ইং মন্ত্রী পরিষদে চূড়ান্ত অনুমোদন বাতিল এবং সংসদে পাশ না করার দাবীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের ডাকা ৯-১১ জুন (রবি,সোম ও মঙ্গলবার) হরতাল প্রয়োজনবোধে নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপন করে। পাশাপাশি দেশের অখন্ডতা রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বং হরতাল পালন করে সফল করার জন্য পার্বত্য বাঙ্গালীদেরকে উদাত্ত আহবান জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত আগামী ৯, ১০ ও ১১ জুন ৭২ ঘন্টার হরতালের সমর্থনে পার্বত্য যুব ফ্রন্ট ৬ জুন বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা সংগঠনের সহ-সভাপতি যুব নেতা শাহ আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সরকার কর্তৃক মন্ত্রী পরিষদে ভূমি আইন সংশোধনী এনে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ৫২% বাঙ্গালী ও সংবিধানবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে তা বাতিলের জোরদাবী জানানো হয়।
তারা বলেন, সরকারকে ইতোপূর্বে যে সময় দেয়া হয়েছিল তাতে তারা আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। বরং সরকার খুনি সন্তু লারমা ও তার দোসরদের আবদারে সম্মতি জানিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে অনড় থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত আগামী ৯- ১১ জুন ৭২ ঘন্টার লাগাতার হরতালে সমর্থন ও রাজপথে অবস্থান করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন এবং আগামীতে দাবী আদায়ের যেকোন সংগ্রামে পার্বত্যবাসীকে সাথে থাকার আহবান জানান। সাথে সাথে হরতালের সমর্থনের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষনা করেন। পার্বত্য যুব ফ্রন্টের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য যুব ফ্রন্টের উপদেষ্টা কাজী মোঃ জালোয়া (জলিল), আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও যুব নেতা এম.এ হান্নান, মোঃ সোহেল, মোঃ সোলাইমান, মোঃ আবছার, পৌর কমিটির আহবায়ক উজ্জলসহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
এই সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ৮জুন শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় গণসংযোগ ও ৯ জুন রোববার টানা ৭২ ঘন্টার হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও আগামী ৭২ ঘন্টার হরতালে সমর্থন জানিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করতে বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে আলোচনায় বসছে বেশ কয়েকটি বাঙ্গালী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এমনই তথ্য জানিয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা একটি সংগঠনের প্রভাবশালী এক নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, রাজনীতিতে মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু নিজস্ব জাতি স্বত্তার অস্থিত্ত্বকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই, তাই আমরা সবাইকে নিয়ে আমাদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার আদায়ে অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কঠোর আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছি।