অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের খাবার বিতরণের নামে ওয়ার্ল্ড ভিশনের অনিয়ম

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে খাবার বিতরণের নামে এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশনের নানা অনিয়ম। ভেন্ডর বিহীন রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর এসব খাবার না খেয়ে যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছে তারা। যত্রতত্রে ফেলে দেয়া খাবারের দুর্গন্ধে দুষিত হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ। প্রশ্ন উঠেছে খাবারের মান নিয়ে। এসব খাবার খেয়ে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছে এমন খবরও পাওয়া গেছে।

শনিবার বিকেলে উখিয়ার বালুখালী ৮-৯ ক্যাম্পে গেলে এসব অভিযোগ করেন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষকে জরুরী ভিত্তিতে ২৪ মার্চ থেকে শুরু হয়ে আগামী ৩১ এপ্রিল পর্যন্ত প্যাকেটজাত খাবার বিতরণ করা হবে।

জিয়াবুল হাসান নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, গত ২৪ মার্চ থেকে কয়েকটি সংস্থা প্রতিদিন দুই বেলা প্যাকেটজাত খাবার রোহিঙ্গাদের মাঝে খাদ্য সরবরাহ করছে। প্রতিদিনের খাদ্যের তালিকায় সবজি ছাড়া কিছু থাকে না। যার ফলে নিম্নমানের এসব খাবার না খেয়ে পথে ঘাটে ফেলে দিতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এর অধীনে ওয়ার্ল্ড ভিশন, রিক ও সুশীলনসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা খাদ্য সরবরাহ করে আসছে।

রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ প্রতিদিন একই ধরণের খাবার খেতে অনীহার কথা জানায়। যার ফলে শত শত রোহিঙ্গা নিম্নমানের এসব খাবার না খেয়ে যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছে। এসব পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ক্যাম্পের ড্রেন গুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে।

ওয়ার্ল্ড ভিশনে কর্মরত কয়েকজন রোহিঙ্গা শ্রমিক বলেন, আমরা ক্যাম্পের বিভিন্ন মাঝির মাধ্যমে এখানে কাজ করছি। খাবার সরবরাহে নিয়োজিত কয়েকজন রোহিঙ্গা দৈনিক ৩৫০টাকায় তারা কাজ করছে বলে জানায়।

খাবারের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, কখনো অর্ধ সিদ্ধ, কখনো পুড়া, নিম্ন মানের সবজি, মরিচ-হলুদ কম, লবণ ঠিক থাকে না। এছাড়া যথাসময়ে না দেওয়ায় অনেক সময় বাসি খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা শামশুল আলম, জুবাইদা খাতুন, শামশুন নাহারসহ অনেকে বলেন, রান্না করা খাবার না দিয়ে চাল-ডালসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরাসরি বিতরণ করা হলে ভালো হবে।

উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরী ভিত্তিতে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) অর্থায়নে এসব খাদ্য বিতরণ করা হয়। তাদের বাজেট এবং নিয়ম অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে গিয়ে অনিয়ম হওয়াটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে কার্ড/তালিকা ভিত্তিক খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করলে ভালো হবে এমনটি জানায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বালুখালীতে রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে ধুলোবালির মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবারসমূহ প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। ওই সময় সাংবাদিক পরিচয়ে ইর্মাজেন্সী কমিউনিটি কিচেনে তদারকির দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ল্ড ভিশনের তসলিমা ফেরদৌসী বলেন এটা সংরক্ষিত এলাকা। বিস্তারিত জানতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে যথাযথ নিয়ম অনুসারে ভেন্ডরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড ভিশনের অপারেশন ডিরেক্টটর অতুল মং বলেন, আমি কেবল অপারেশনাল দিকটা দেখভাল করি। কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য সরবরাহের কাজে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তিনি ক্যাম্পে খাদ্য সরবরাহ সম্পর্কে জানতে তার ফলিয়াপাড়াস্থ অফিসে যেতে বলেন।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের ইমর্জেন্সী ভিত্তিতে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তারা পুন:স্থাপন হয়ে গেলে তা বন্ধ হয়ে যাবে। খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে হাসপাতাল গুলোতে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও এনজিও গুলোকে খাবারের মান ভালো করার কথা বলেছি। শীঘ্রই খাবার বিতরণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তবুও ওয়ার্ল্ড ভিশন এবং সুশীলনকে আগামী কালকের মধ্যে ডাকা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন