parbattanews

অজ্ঞতার কারনে জলাতংক কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ- কুসংস্কারের বলি হল শিশু কায়সার

নিজস্ব প্রতিনিধি:

শিশু কায়সারের বয়স ৭ বছরেরও বেশি। বিকালে বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে হঠাৎ কুকুরের গায়ে ধাক্কা লাগে। আর অমনি কুকুরটি তার পায়ে কামড় বসিয়ে দেয়। বাড়িতে এসে কুকুরে কামড়ের কথা বললে তারা বাবা ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিতে চাইলে সে সময় তার দাদী বলেন, ‘ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। ওসব ডাক্তারের কাজ না। কলা পড়া খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে।

দাদীর কথামত এক বৃদ্ধার কাছ থেকে কলা পড়া খাওয়ানো হয় শিশু কায়সারকে। সেই বৃদ্ধা নাকি স্বপ্নে পেয়েছেন এই ওষুধ। কুকুর কামড়ানোর পর প্রায় দেড়মাস সব ঠিকঠাক ছিল। তার অভিভাবকও নিশ্চিন্ত ছিলেন হয়ত কলাপড়া খাওয়ানোর ফলে তাদের সন্তান সুস্থ রয়েছে। কিন্তু না। বড় বেশি ভুল হয়ে গেছে। ততদিনে শিশুটি পুরোপুরিভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে জলাতংক রোগে। কুকুরে কামড়ানোর পর ভ্যাকসিন না দেওয়ার তার এই করুন অবস্থা। এদিকে বাচ্চার মূমুর্ষূ অবস্থা দেখে প্রায় পাগল হয়ে গেছেন অভিভাবকরা। তারা দৌড়-ঝাপ শুরু করেছে চিকিৎসকের কাছে।

এদিকে চিকিৎসক বলেছেন, তার শারীরিক অবস্থা ভাল না। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম অথবা ঢাকা নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। গত ১২ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে শিশু কায়সার মারা যায় জলাতংক রোগে আক্রান্ত হয়ে।

কায়সার সদর উপজেলা পিএমখালীর বাংলাবাজার এলাকার আলী হোসেনের ছেলে। কায়সারের মৃত্যুর পরে তার অভিভাবকরা (যারা অসুস্থ অবস্থায় সেবা করেছিল) জলাতংক রোগের ভ্যাকসিন নেন। তাদের অনেক বড় মাসুল দিয়ে বুঝতে হয়েছে কুকুর কামড়ালে কলাপড়া নয় ভ্যাকসিন দিতে হয়। এসব কথা বলেছেন কুসংষ্কারের বলি হয়ে অকারনে ঝরে যাওয়া কায়সারের বাবা আলী হোসেন।

খবর নিয়ে জানা যায়, শুধু কায়সার নয়। অনেকে মারা গেছে এই কুসংষ্কারের ফলে। অনেক অসচেতন লোক রয়েছে যারা কুকুর বা অন্য কোন প্রাণী কামড় অথবা আঁচড় দিলে জলাতংক রোগের ভ্যাকসিন দেয়না। তারা নির্ভর করে পানিপড়া, ঝাড়ফুঁক, গাছ-গাছড়া, কলাপড়া, গুড়পড়া ইত্যাদির উপর। যার ফলে পরিণতিটা ঘটে ভয়ংকর। এমনও অনেক রয়েছে যারা কুকুরের কামড়ে পেটে বাচ্চা হওয়াসহ নানা ধরনের কুসংষ্কার বিশ্বাস করে। আর তা বলে বেড়ায়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, কুসংষ্কারের ফলে লোকজন জলাতংক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক। কুকুর বা কোন পশু কামড় অথবা আঁচড় দিলে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এছাড়া কামড় বা আঁচড় দেওয়ার সাথে সাথেই পানি ও কাপড় কাঁচা সাবান দিয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধরে ক্ষত স্থানটি ধুয়ে ফেলতে হবে। তিনি আরো জানান, অনেকের ধারণা জলাতংক রোগের ভেকসিন খুবই ব্যায়বহুল এবং এটি পাওয়াটা কষ্টকর। এই ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সদর হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনা খরচে জলাতংক রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

Exit mobile version