parbattanews

অনিশ্চয়তার মাঝে বেড়ে উঠা রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা

উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে অনিশ্চয়তার মাঝে বেড়েই উঠছে রোহিঙ্গা শিশুরা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরবর্তী মিয়ানমারে সেনা নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নারী গর্ভবতী অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।

এখানকার উদ্বাস্তু জীবনেও থেমে নেই বিয়ে-শাদির মতো সামাজিক অনুষ্ঠান। এর আগে ১৯৬৮ সাল থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত রয়েছে আরও অন্তত আড়াই লাখ রোহিঙ্গা। নতুন করে অনুপ্রবেশের পর গত ২৪ মাসে এখানে জন্ম নিয়েছে আরও প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শিশু! বর্তমানে সন্তানসম্ভবা রয়েছে আরও অন্তত ২০ হাজার নারী। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রবল উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় অধিবাসীরা।

তাদের মতে যে হারে রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। যে কোনোভাবে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে অচিরেই প্রাকৃতিক বৈচিত্রের ভরপূর উখিয়া-টেকনাফে জনবিস্ফোরণ ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ শিশু। বিপুল এই জন স্রোতের পরিষেবা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের প্রশাসন। আর ক্রমাগত অপরাধকান্ড জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

অনিয়ন্ত্রিত এই উচ্চ জন্মহার যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে আমাদের দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতিতে চলমান রয়েছে ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুইটি সন্তানই যথেষ্ট’ এই ধারণা, সেখানে একেকটি রোহিঙ্গা পরিবারের সন্তান সংখ্যা গড়ে ৫ থেকে ১০ জন। জন্মনিয়ন্ত্রণকে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের অধিকাংশই মনে করেন এটা ‘পাপকাজ’। তাই তারা কোনো ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন না।

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ইউনিসেফ কর্মী জানান, শরণার্থীদের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোনো বালাই নেই। ফলে ক্রমশ বাড়ছে রোহিঙ্গাদের জন্মহার। পাশাপাশি রয়েছে বাল্যবিবাহের প্রচলন। এসব অনিশ্চিয়তার মধ্যে বেড়ে উঠা রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।

২০১৭ সালের ২৫ আগষ্টের পর মায়ের সাথে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা এক শিশুর চোখে মূখে ফুটে উঠেছে অনিশ্চিয়তার চিত্র। শিশুটি তাকিয়ে আছে এই পৃথিবীতে। ময়নাঘোনা ১১ নং ক্যাম্পে অনিশ্চিয়তায় বেড়ে ওঠা শিশুটিকে দেখতে পায় এ প্রতিবেদক। এ রকম হজোরো রোহিঙ্গা শিশু বেড়ে ওঠছে ছোট্ট ছোট্ট ঘরে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর আপত্তি সত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কাজ চুড়ান্ত করে এসেছে বাংলাদেশ সরকার।

২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে মিয়ানমারে অনুকুল পরিবেশ না থাকার অজুহাতে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, ট্রানজিট ক্যাম্পে তাদের স্থানান্তর না করাসহ নানা কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ তাদের প্রত্যাবাসন শুরু হবে তা নিয়ে এখনও রয়েছে সংশয়।

একাধিক রোহিঙ্গার সাথে কথা হলে তারা অনেকেই মিয়ানমারে ফিরতে চান না। সেখানে এখনো ফেরার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। মিয়ানমারে ফিরে গেলে কী হবে তা ভেবে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা। রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হওয়ার আগে তাদের ফেরত পাঠালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবন ফের ঝুঁকিতে পড়বে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা জিয়াবুর রহমান।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরগুলোর শোচনীয় অবস্থা ও তাদের চরমপন্থী হয়ে ওঠার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা বেকার ও শিক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই এবং সারাদিন তারা এক জায়গায় থাকছে এমন পরিনতি কে চাইতে পারে?

তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে মিয়ানমার ফেরত নিতে বাধ্য হয়। আর তা সম্ভব না হলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দীর্ঘদিন অনিশ্চিয়তার মধ্যে বসবাস করতে হবে। পাশপাশি তাদের জন্মদাতা শিশুদের নিয়েও আমাদেরকে পড়তে হবে বিপদে।

Exit mobile version