parbattanews

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সাজেক

সাজেক

সাজেক থেকে ফিরে মো. ইমরান হোসেনঃ

মেঘ দেখতে আমরা দার্জিলিং যাই, শিলং যাই কিন্তু আমাদের অজানা ছিল দেশের মধ্যেই এমন জায়গা আছে যেখানে মেঘ এসে বাস্তবে ভিজিয়ে দেয় শরীর আর ঝাপসা করে চারিদিক।

জায়গাটার নাম সাজেক। যদিও স্থানটি রাঙ্গামাটি জেলার অর্ন্তগত কিন্তু যেতে হয় খাগড়াছড়ি-দিঘিনালা হয়ে। সাজেক যেতে কারো মনে হতেই পারে সাজেক যাওয়ার পথটা দেশের সর্বোচ্চ উঁচু সড়ক। আমাদের রুট- মানিকছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে দিঘিনালা ভায়া বাঘাইহাট হয়ে তারপর সাজেক।

গত ৩০ অক্টোবর শিম্প্রুপাড়া হাতেখড়ি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ৩২জনের একটি দল সাজেক ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ি। আঁকা বাঁকা পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে ছুটে চলে আমাদের বহন করা পিকআপ গাড়িটি। পুরো রাস্তাটিই অপূর্ব আর পাশপাশের দৃশ্যগুলো ছিল মনোরম। কিন্তু এত উঁচু নিচু আঁকা বাঁকা পাহাড়ী রাস্তা যে অভিজ্ঞ চালকবিহীন যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা। এরই মাঝে ছুটে চলে আমাদের গাড়িটি।

অদ্ভুত আর চমৎকার বিষয়টি হলো রাস্তার দু’পাশের পাহাড়ী ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলি যেভাবে আমাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য নেচে নেচে, হাত নাড়িয়ে টা’টা দিয়ে অভিবাদন জানিয়েছে তা ভোলার মত নয়। কে জানে, তাদের ওভাবে অভিবাদন জানানো শিখিয়েছে কে? সাজেকের নাম নিলেই ওই কচিকাঁচা বাচ্চাদের কথা মনের অজান্তেই ভেসে উঠবে সকলের।

সবুজের মোড়ানো প্রকৃতির মাঝে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে দুঃসাহসিক এই ভ্রমন যেখানে ফুরাবে, সেটাই সাজেকের মূল কেন্দ্র। নাম রুইলুই পাড়া। ছবির মত দেখতে। দুপাশের সারি সারি লাল-সবুজ রঙের বাড়ি। কাছে দূরের সব পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘ জমে আছে। উঁচু পাহাড়গুলো সবগুলো অবশ্যই সীমান্তের ওপারে বটে। দুপুর ১.২৫ মিনিটে আমরা সাজেক উপত্যাকায় পৌঁছলাম। তখনি পুরো সাজেক ভ্যালী সোনালী আলোয় ভেসে যাচ্ছিল। খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে সকলে বেরিয়ে পড়লাম। কেউ ছবি তুলছে, কেউ ঘুরছে, কেউ বা সীমান্তের ওপারে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে যেখানে পাহাড়, আকাশ, মেঘ একাকার হয়ে আছে। অপরূপ নয়নাভিরাম দৃশ্য।

হঠাৎ করে আকাশ থেকে কালো মেঘগুলো চারিদিকে কুঁয়াশার মতো হয়ে এসে আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে গেল। মেঘ শুধুই আকাশে দেখেছি, কিন্তু বাস্তবে মেঘ ধরা এবং মেঘ এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাওয়া স্বপ্নের কল্পনাতে যা ছিলনা তাই হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পুরো সাজেক ভ্যালীর চারিদিকে কুঁয়াশার মতো মেঘে সাদা হয়ে গেল। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তখন বিকাল ৩টা। শুরু হলো ফিরে আসার পালা। রাস্তাঘাট কিছুই দেখা যাচ্ছিল না কুঁয়াশার জন্য। তারপরও ফিরে আসতে হবে। রওয়ানা হয়ে গেলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে, ফেলে আসতে হলো সাজেক ভ্যালীর অপরূপ নয়নাভিরাম দৃশ্য।

সাজেকে থাকার মত জায়গা মূলত দুটি। সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘সাজেক রিসোর্ট’ আর ‘রুন্ময় রিসোর্ট’। অত্যন্ত সুন্দর দুটি রিসোর্টে ৫টি করে কামরা রয়েছে। রয়েছে খাওয়ার ব্যবস্থাও। দেশী তরকারি, সবজি, খিচুড়ি ও মাংস রয়েছে খাবার তালিকায়। মাছ তেমন একটা পাওয়া যায়না বললেই চলে। তবে দামও মোটামুটি হাতের নাগালে বলে জানা গেছে। আগ থেকে বুকিং দিয়ে রাখলে ভালো। অন্যথায় সাজেকে থাকতে হবে খোলা আকাশের নিচে। অগ্রিম বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে এই ঠিকানায়: www.rock-sajek.com

Exit mobile version