অপহরণের ৮মাস পর মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়া পেলো জেএসএসের ১১ নেতাকর্মী

মুক্তি

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রয়ারি রাঙামাটি শহরের জিমনেসিয়াম চত্বরে জনসংহতি সমিতির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ১৬ ফেব্রুয়ারি কাপ্তাই হ্রদের নৌপথ ধরে লংগদুতে ও বাঘাইছড়ি ফেরার পথে কাট্টলি এলাকার জোড়াটিলা থেকে অপহৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ৬২ জন নেতাকর্মীর মধ্যে সর্বশেষ সোমবার দিনের শুরুতে খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলার কোন এক অজ্ঞাত স্থান থেকে ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে অপহরণকারিরা। অপহৃত হওয়ার দীর্ঘ আটমাস পর মুক্তি পেয়েছেন অপহৃতরা। এ নিয়ে কয়েক দফায় ৫৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখনো খোঁজ মেলেনি ৪ নেতাকর্মীর। এছাড়া পাওয়া জেএসএস নেতাকর্মীদের মধ্যে লংগদু উপজেলার সন্তু লারমা সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি যশু চাকমা, সাধারণ সম্পাদক বিনয় সাধন চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক অমর বিকাশ চাকমা রয়েছেন বলে জানা গেছে।অপর একজন বরকলের বাসিন্দা এবং বাকি সাতজন বাঘাইছড়ি উপজেলার বলে জানাগেছে। সোমবার দিনের কোনো এক সময় তাদের দীঘিনালার দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অপহৃতদের স্বজনরা।

রাঙ্গামাটি জেলার পুলিশ সুপার আমেনা বেগম অপহৃতদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট এলাকাধীন লংগদু থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম চৌধুরী অপহৃতদের মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, অপহৃতদের মধ্যে লংগদু উপজেলার চারজন এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার সাতজন মুক্তি পাওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি, তবে এ বিষয়ে মধ্যস্ততাকারি বা অপহৃতদের স্বজনরা বিস্তারিত কিছু জানাচ্ছে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা অপহৃতদের মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিজনকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে মাথাপিছু এক লাখ টাকা করে নিয়েছে অপহরণকারিরা। আর টাকা হাতে পৌছার পর নিশ্চিত হয়ে তারপর মুক্তি দেওয়া হয় অপহৃত ১১ জনকে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, অপরহরণ কারিদের মূল তার্গেট ছিলো লংগদু উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেএসএসের সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা। প্রতিপক্ষ গ্রুপের কাছে মনি শংকর একটি আতংকের নাম। কারণ আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনীতিতে প্রচুর প্রভাব ফেলা ও পাহাড়ি-বাঙ্গালীর সাথে সদালাপী মনি শংকরের কারনে তাদের রাজনীতিতে এক প্রকার ভাটা পড়তে শুরু করায় মনি শংকরকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে চালানো হয় অপহরণ মিশনের। কিন্তু অপহরণকারিরা ৬২ জনকে একই সাথে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার কারনে সাধারণ পাহাড়িদের চাপের মুখে পড়ে। যার প্রেক্ষিতে বারংবার আলোচনা সাপেক্ষে দফায় দফায় সর্বমোট ৫৮ জনকে মুক্তি দেয় অপহরণকারিরা। মুক্তিপণের অংক সঠিক পরিমান না পাওয়ায় মনি শংকরকে এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি।

একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানাগেছে মনি শংকরকে মুক্তির বিনিময়ে পাচঁ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারিরা।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রয়ারি রাঙামাটি শহরের জিমনেসিয়াম চত্বরে জনসংহতি সমিতির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ১৬ ফেব্রুয়ারি কাপ্তাই হ্রদের নৌপথ ধরে লংগদুতে ও বাঘাইছড়ি ফেরার পথে কাট্টলি এলাকার জোড়াটিলা থেকে অপহৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ৬২ জন নেতাকর্মীকে অপহরণের পাঁচদিন পর ৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং অপহরণকারিদের কবল থেকে একজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও বাকী ৫২ জনের খোঁজ মিলছিলোনা। অপহরণের সাড়ে পাঁচমাস পর গত ২৯ জুলাই মুক্তি দেওয়া হয় ৩৭ জনকে। আর সোমবার ঠিক আটমাস পর মুক্তি দেওয়া হলো আরো ১১ জনকে। এখনো অপহরকারীদের জিম্মায় আছে আরো ৪ জন জেএসএস নেতাকর্মী।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ অপহরণ ঘটনার জন্য জনসংহতি সমিতি প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছে, তবে ইউপিডিএফ বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন