অবশেষে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাত্রলীগ নেতাসহ অপহৃত তিন ব্যক্তি ৩০ ঘন্টা পর মুক্ত
বাইশারী প্রতিনিধি:
অবশেষে দীর্ঘ ৩০ ঘন্টা পর বাইশারীর ছাত্রলীগ নেতা নুরুল কবির রাশেদ, ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন, আলীক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান মুহুরী মও. হাবিবুর রহমান ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে মুক্ত করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
গত মঙ্গলবার ঈদগাঁও থেকে মিনিবাস যোগে বাইশারী আসার পথে ঈদগড় সড়কের ধুমচাকাটা নামক স্থান থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় তাদের। পরদিন বুধবার সকাল ৯ টা থেকে অপহৃতদের মোবাইল ফোন থেকে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে আসছিল। অপহরণের পর থেকে বাইশারী পুলিশ, ঈদগড় পুলিশ, ঈদগাঁও পুলিশ, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রভাব চন্দ্র ধরের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে আসছিল। অভিযানের চাপের মুখে সন্ত্রাসীরা অপহৃতদের দূর্গম এলাকায় নিয়ে যেতে পারেনি। যার ফলে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে সড়কের বৈদ্য পাড়া নামক স্থানে পাহাড়ের পাশে তাদের ছেড়ে দিয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
খবর পেয়ে বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু মুছা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে অপহৃতদের উদ্ধার পূর্বক নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তসলিম ইকবাল চৌধুরী, ইব্রাহিম খলিল, সংবাদ কর্মী হাফিজুর রহমানসহ এলাকার জনসাধারণ।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে অপহৃতদের বাড়িতে গিয়ে উদ্ধার হওয়া নেজাম উদ্দিন, রাশেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিপণের জন্য তাদের বেদম প্রহার করেছে। যার ফলে তারা মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হয়েছে। অপহৃতরা আরো জানান, অহরণের পর থেকে তাদের স্থান পরিবর্তন করে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখে এবং অভিযানের কারণে সন্ত্রাসীরা তড়িঘড়ি করে মুক্তিপণের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। অন্যথায় তাদের হত্যারও হুমকি প্রদান করেছিল।
উল্লেখ্য, ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারীর সড়কে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সময় যাবৎ একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ বাস, জীপ, সিএনজি, অটোরিক্সা ও মালামালের গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি, খুন-খারাবি, অপহরণ করে মুক্তিপণ বানিজ্য চালিয়ে আসছে। যার ফলে বাইশারী-ঈদগড়-গর্জনিয়াসহ আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক মানুষ এসব সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ তিন ইউনিয়নের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম উক্ত সড়ক পথ হওয়ায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয় স্থানীয়দের। সড়কে দুইটি পয়েন্টে সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত পুলিশ ডিউটি থাকলেও সন্ত্রাসীরা দিন-দুপুরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত উক্ত সড়কে শতাধিক মানুষ অপহরণ চক্ররা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে। এছাড়া শতাধিক মানুষ ডাকাতের পিটুনিতে গুরুতর আহত ও পঙ্গু অবস্থায় জীবন যাপন করছেন এবং ডাকাতের গুলিতে গত কয়েক বছর আগে ঈদগড় পুলিশ ক্যাম্পের একজন নায়েক মৃত্যুবরণও করেছেন। তিন ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ও ব্যবসায়ীরা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তির জন্য উক্ত পাহাড়ে সেনা-বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযানের দাবি জানিয়েছেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মুক্ত তিন ব্যক্তি সুস্থ রয়েছেন এবং এ পর্যন্ত থানায় কোন মামলা করা হয়নি বলেও জানা যায়।