অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে দীঘিনালা তাঁত প্রশিক্ষণ ও বস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র

 

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

কার্যালয়ের সামনে সুন্দর সাইনবোর্ড এ লেখা- ‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন, দীঘিনালা তাঁত ও বস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র, কুটির ও গ্রামীণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা’। হঠাৎ এই সাইনবোর্ড দেখে মানুষের মনে হতে পারে অনেক বড় একটি প্রতিষ্ঠান এটি। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে মনে হবে প্রশিক্ষনার্থীদের ভিড়, কর্মসংস্থানের আশায় সবাই কাজ শিখতে ব্যস্ত। কিন্তু সরেজমিন পরিদর্শনে ভেতরে গেলে দেখা যাবে ঠিক তার উল্টো চিত্র। তাঁত যন্ত্র গুলো অলস পড়ে আছে, অনেক গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘরের জরাজীর্ণ অবস্থা, অনেকটা স্টোর রুমের মত। হ্যাঁ, এটি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা তাঁত প্রশিক্ষণ ও বস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রের বর্তমান চিত্র।

দীর্ঘ পাঁচ বছর জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকার পর গত বছরের নভেম্বর থেকে চারজন প্রশিক্ষনার্থী নিয়ে তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের দীঘিনালা উপজেলা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র দুইজন প্রশিক্ষণার্থী গামছা বানানোর কাজ শিখছেন। পাঁচ বছর বন্ধ থাকার কারনে তাঁত ঘরের জরাজীর্ণ অবস্থা, ঘরের চালে মাকড়সা জালি বেঁধেছে, বারান্দার চালা ভেঙ্গে গেছে, কাঠের তাঁত গুলোতে ধূলো ময়লা জমে আছে। ঘরের ভিতর স্যাতসেঁতে অবস্থা। সূতা কাটার চরকাগুলো ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় পড়ে আছে।

কথা হয় দীঘিনালা উপজেলার তাঁত সহকারীর দায়িত্বে থাকা সুজিতা চাকমার সাথে। তিনি জানান, এই দীঘিনালা কেন্দ্রে তিনি কর্মরত আছেন প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯০ সাল থেকে। ২০০৮ সালে তাঁত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে তিন মাসব্যাপি গামছা ও লুঙ্গী বানানোর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রমে প্রশিক্ষনার্থী পাওয়া যায়নি, তাই চারজন মাত্র প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে কার্যক্রম চলছে। সুজিতা চাকমা আরও জানান, এক সময় এই প্রতিষ্ঠানে প্রায়বছর ব্যাপি অর্ধ শতাধিক প্রশিক্ষনার্থী থাকতো। আমরা যারা প্রশিক্ষক আছি তাঁরা বিশ্রাম নিতে পারতাম না তখন। আর এখন তার পুরোই উল্টো, কোন কাজ নেই এখন। প্রশিক্ষনার্থীও পাওয়া যায় না ঠিকমত। অলস সময় কাটাই আমরা, এমনটাই জানান তিনি। এই ব্যাপারে তাঁত সহকারী সুজিতা চাকমা আরো বলেন, ভাতা কম তাই এখন আর প্রশিক্ষনার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ৫ বছর পর গত নভেম্বর মাসে আবার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হলেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে কোন প্রশিক্ষণার্থীর সাড়া পাওয়া যায়নি। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে চারজন প্রশিক্ষণার্থী পাওয়া গেছে। প্রতি মাসে তিনশ টাকার ভাতায় কেউ কাজ শিখতে চায় না। ভাতা বৃদ্ধি করা হলে প্রশিক্ষনার্থী পাওয়া যেত বলে জানান সুজিতা চাকমা। এই প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষনার্থী রেকি চাকমা ও বিপুলা চাকমা বলেন, গত নভেম্বর মাস থেকে কাজ শিখছি আমরা। মাসে তিনশ টাকা ভাতায় কাজ করে আমাদের পোষায় না। বাড়ির পাশে তাঁত কেন্দ্র তাই কোন রকম কাজ শিখছি। ভাতা বাড়িয়ে দিলে আমাদের মত অনেকে কাজ শিখতে আগ্রহী হয়ে আসতো।

১৯৯০ সালে এই কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তাঁত, সেলাই, কার্পেন্টারী, বাঁশ ও বেতের কাজের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। ২০০৮ সালে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এখন কেন্দ্রের সব ঘরই জরাজীর্ণ, কক্ষ গুলোতে বৃষ্টির পানি পড়ে। বৃষ্টি হলে অফিস কক্ষেও বসে থাকা যায় না। দরজা, জানালা ভাঙ্গা, দীর্ঘদিন তাঁতগুলো চালু না থাকায় ১৪টি তাঁত যন্ত্রের মধ্যে দুইটি কোন রকম চলছে, ১২টি তাঁত যন্ত্র বর্তমানে নষ্ট হয়ে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এক সময় এ কেন্দ্রটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল বলে কর্মচারীরা দাবী করেন। এই তাঁত কেন্দ্রে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা নিরালয় চাকমা বলেন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের খুবই জরাজীর্ণ অবস্থা। নভেম্বর থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হলেও প্রশিক্ষনার্থী পাওয়া যায়নি। চারজন দিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। কর্তৃপক্ষ সব বিষয় গুলো অবগত আছেন, তারপরও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছেনা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন