parbattanews

‘অবৈধ অস্ত্র হাতে নিয়ে মানুষের কল্যাণ করা যায়না’

বান্দরবান আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অতিথিরা

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ বলেছেন, পাহাড়ি-বাঙ্গালীর হাজার বছরের কৃষ্টি কালচার নিয়ে একসাথে বসবাস করার জন্য জাতির পিতার নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ দেশকে স্বাধীন করেছিল। আর জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা পার্বত্য এলাকার অশান্তি দূর করার জন্য ১৯৯৭ সনে শান্তিচুক্তি করেছেন। অশান্তি দূর করে মানুষ শান্তিতে বসবাসের জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, কিন্তু দু:খজনক যে অনেকে ভুল তথ্য নিয়ে অস্ত্র হাতে পাহাড়ে শান্তি পরিবেশ অশান্ত করার জন্য চেষ্টা করছে। অবৈধ পন্থায় বা অবৈধভাবে অস্ত্র হাতে নিয়ে মানুষের কোন কল্যাণে আসা যায় না। পৃথিবীর কোন দেশে কেউ অস্ত্র হাতে নিয়ে মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনি।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বান্দরবান রাজারমাঠে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্য শৈ হ্লার সভাপতিত্বে সম্মেলনে হানিফ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের কথা তুলে ধরে আরো বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল সেই দল বিএনপির দ্বারা দেশ এবং জাতি কখনো উপকৃত হয়নি। কারণ তাদের জন্মই হয়েছিল অবৈধভাবে, অবৈধ পন্থায়। অবৈধ ক্ষমতা দিয়ে কখনো জনগণের কল্যান করা যায়না এটা প্রমাণিত হয়েছে বার বার।

পাহাড়ে অস্ত্রধারীদের সর্তক করে প্রধান অতিথি বলেন, শেখ হাসিনা এলাকার মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার জন্য শান্তিচুক্তি করেছেন। এই চুক্তির অনেক শর্ত পূরণ করা হয়েছে। বাকী শর্ত প্রক্রিয়াধীন আছে। ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে। তাই যে সমস্ত সন্ত্রাসী গ্রুপ নামে বেনামে অস্ত্র হাতে নিয়ে পাহাড়ে অশান্তি করার চেষ্টা করছে তাদের এই কাজ পরিহার করার আহ্বান জানান।

এর আগে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ অতিথিরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম এমপি বলেন, ১৯৯৬ সালের আগে পাহাড়ের মানুষ দিনের বেলায়ও শান্তিতে চলাচল করতে পারতেন না। কিন্তু শান্তিচুক্তির পরে সমগ্র পাহাড়ি অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙ্গালী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। শান্তি বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হচ্ছে। দূর্গম এলাকায়ও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।

তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার কারণে সর্বক্ষেত্রে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বছরের শুরুতে ৩৮ কোটি বই শিক্ষার্থীরা হাতে পাচ্ছে। পদ্ধাসেতু, হাতিরঝিল, ফ্লাইওভার, কর্ণফুলী ট্র্যানেল, বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে, ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন দেখে। দেশের মানুষ আজ খুশি, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ভূয়সী প্রশংসা করছে শেখ হাসিনার।

পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, শেখ হাসিনা উন্নয়নের প্রতিক। পাহাড়ে চলমান উন্নয়ন তারই প্রমাণ। এ সময় তিনি দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সফল করার জন্য জেলা-উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি কেন্দ্রীয়, তিন পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সকল নেতৃবৃন্দের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীন বলেছেন, পানিকে যেমন বিভাজন করা যায়না তেমনি বান্দরবানের মাটি ও মানুষের কাছ থেকে বিভাজন করা যায় না বীর বাহাদুরকে। বীর এবং বাহাদুর ক্ষমতার দ্বম্ব অহংকার, ঐশ্বর্য, প্রভাব প্রতিপত্তিতে নয়। মানুষের ভালোবাসা কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেই বীর বাহাদুর হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু পার্লামেন্টে দাড়িয়ে বলেছিলেন- তোমরা শুধু জাতির পিতা শেখ মুজিবকে দেখছো কিন্তু শেখ মুজিব কঠোর হতে জানে তা দেখোনি। সেটা এখন থেকে দেখবে। যার কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল। আজকে বাঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাও ঘোষনা করেছেন, আমিও কঠোর হতে জানি, এই দেশে লুটপাট করে খাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। লুটপাটকারীদের হাত থেকে দেশ এবং দেশের সম্মান বাঁচানোর জন্যই আজ দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে।

কেন্দ্রীয় উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেছেন, বীর এবং বাহাদুরের মাঝে কর্মের মাধ্যমে সমন্বয় করেছের বীর বাহাদুর। তিনি তার রাজনৈতিক উচ্চতা সেই তাজিংডং পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। পার্বত্যঅঞ্চল একসময় অবহেলিত ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এই পার্বত্য এলাকায় অগ্রধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। আগামীর নেতৃত্ব বীরের মাধ্যমে শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করবে।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, মহিলা এমপি বাসন্তী চাকমা, বান্দরবান পৌর মেয়র ইসলাম বেবী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাহাদুর, কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মংসুইঝপ্রু চৌধুরী অপু, উপ-প্রচার সম্পাদক শফিকুর রহমান ফারুক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, কক্সবাজার পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা রেজাউল করিম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব হক মুকুলসহ অন্যান্যরা।

সম্মেলনে পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লক্ষী পদ দাশ।

Exit mobile version