parbattanews

অবৈধ টমটমের জট কক্সবাজারে

পর্যটন শহর কক্সবাজার এখন যেন টমটমের শহরে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার তাগিদে শহরে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধের উদ্যোগ কিছুটা সফল হলেও শহরবাসী নতুন করে টমটম জটে পড়েছে এখন। আনাড়ি টমটম চালকদের হাতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা এবং হতাহত হচ্ছে মানুষ। পৌর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মহলের শিথিলতায় পার পেয়ে যাচ্ছেন ওসব আনাড়ি টমটম চালক মালিকরা। এতে করে কক্সবাজার শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অবৈধ টমটমের বহর। টমটম জটে প্রায় সময় রাস্তায় হাঁটা-চলাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। টমটম জটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পর্যটক ও শহরবাসী।

কক্সবাজার শহরে একাধিক সড়ক থাকলেও প্রধান সড়কটিই একমাত্র যানবাহন চলাচলের উপযোগী। শহরের আভ্যান্তরীণ সড়কগুলো দখল বেদখলে কাহিল। তাই প্রধান সড়কেই চাপ পড়ে সব ধরণের যানবাহনের। কক্সবাজার শহরকে যানজট মুক্ত করতে পৌর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন শহরে বড় যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে। তবে ছোট যানবাহন চলাচলের সুযোগে টমটম নামের ইজিবাইক গুলো দখল করে নেয় কক্সবাজার শহরের রাস্তা-ঘাট। ধূঁয়ামুক্ত পরিবেশ সম্মত হওয়ায় প্রশাসন শহরে ইজিবাইক গুলোর চলাচল পারমিট করে। কিন্তু এই সুযোগে শহরে প্রয়োজনের চার গুণ বেশি ইজিবাইক চলাচলের কারণে সৃষ্টি হয় নতুন করে টমটম জট।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরে যে পরিমান টমটমের প্রয়োজন তার চার গুণ বেশি টমটম চলাচল করছে। এসব টমটম ২৫০০ মত অনুমতি থাকলেও অন্য গুলোর কোন অনুমতি নেই কোন কর্তৃপক্ষের। তার পরেও ৮ হাজারের অধিক টমটম নির্বিঘ্নে চলাচল করছে শহরে।

অধিকাংশ টমটম চালক আনাড়ি ও অপরিপক্ক। দেখা গেছে, চালকদের অনেকেই সাগরে মাছ ধরার কাজ করত, সেখানে মন্দা দেখা দেয়ায় শহরে এস টমটম চালানো শুরু করে। আবার কেউ ছিল রিক্সা চালক, এখন হয়ে গেছে টমটম চালক। অথচ কারো কোন প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা নেই। তাই রাস্তায় দেখা যায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। এছাড়াও এসব হাজার হাজার টমটম প্রতিদিন অবৈধ সংযোগে বিদ্যুৎ চুরি করে শহরবাসীর বিড়ম্বনা বাড়ালেও যেন দেখার কেউ নেই। অধিকাংশ ফিটনেসবিহীন টমটমের লাইট জ্বলেনা। রাতের বেলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েও ঘটে দূর্ঘটনা।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, গত ৫ বছরে কক্সবাজার শহরে চলাচলকারী টমটমের ধাক্কায় ২০ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হলেও আহত হয়েছে কম পক্ষে তিন শতাধিক মানুষ।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের অনার্স পড়ুয়া ছাত্র রফিক উল্লাহ আক্ষেপ করে বলেন-টমটমের জ্বালা আর সহেনা। প্রতিনিয়ত হয়রানি আর জটলা ভালো লাগেনা। অপরদিকে সড়কের অবস্থাও বেহাল। এভাবে আর কত ?

এ প্রসঙ্গে কথা হলে ট্রাফিক ইনসপেক্টর কামরুজ্জামান বকুল জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় আড়াই হাজার মত টমটম চলাচলের সুযোগ থাকলেও এখন আসলে কত টমটম চলাচল করে তা তিনি জানেন না। পৌর কর্তৃপক্ষ এগুলোর অনুমোদন কর্তৃৃপক্ষ হলেও শহরে চলাচলকারী অসংখ্য টমটম হচ্ছে লাইসেন্স বিহীন। তবে ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে বলেও তিনি জানান।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, শহরে ৬/৭ হাজার মত টমটম চলাচল করলেও পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে আড়াই হাজার মত। তবে অবৈধ চলাচলকারী টমটমের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়ে থাকে। এই পরিমান অবৈধ টমটমের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য পৌর সভা ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা নতুন করে টমটমের লাইসেন্স না দেয়া এবং শহরে অবৈধ টমটম চলাচল বন্ধ করে যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের দাবি জানান।

Exit mobile version