parbattanews

অর্থ সংকট ও সিন্ডিকেটের কবলে কেপিএম পেপার মিলস্

KPM 1 copy

কাপ্তাই প্রতিনিধি:

এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ কাগজকল কর্ণফুলী পেপার মিলস লি. (কেপিএম) যা রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এ মিলের যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ বছর এ প্রতিষ্ঠানটি দেশে কিংবা বিদেশে মান সম্মত কাগজ উৎপাদন করে সুনাম অক্ষুন্ন রেখে চলেছে।

ক্ষেতনামা মিলটি আজ এক বছর যাবত অর্থ সংকট এবং সিন্ডিকেটের লোলুপ দৃষ্টিতে পড়ে দিন, দিন তার সুনাম, উৎপাদন এবং কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ হতে চলেছে। মিলকে নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কালোগ্রাসে দিন, দিন তার ইতিহাস ঐতিহ্য হাড়াতে বসেছে। মিলের কোটি, কোটি টাকার যন্ত্রাংশ অযত্নে, অবহেলায় পড়ে আছে।

দীর্ঘ বছর যাবত মিলের বিভিন্ন শাখা এবং কাপ্তাই চিপিং এন্ড হ্যান্ডলিং প্লান্টে রিফরশেন (সংস্কার) না করার ফলে অনেক যন্ত্রাংশ বছরের পর বছর অকেজ হয়ে জং ধরে যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। এবং মিলের বিভিন্নস্থানে কোটি টাকার সম্পত্তি অন্যরা দোখলে নিয়ে অবৈধ ভাবে বসবাস করছে। কয়েক দফায় শ্রমিক বদলি, বেতন বন্ধ, শ্রমিকদের অবসর জনিত প্রাপ্য টাকা এবং বাঁশ সরবরাহ ঠিকাদারদের কোটি টাকা মিল কর্তৃপক্ষের নিকট বছরের পর বছর পাওনা রয়েছে। বর্তমানে মার্চ মাসের বেতনসহ তিন মাসের বেতন শ্রমিকদের বন্ধ রয়েছে।

উৎপাদন ৭০ থেকে ১৮ কিংবা ২০ নেমে আসার ফলে মিলে শ্রমিক/কর্মচারীদের কর্তৃপক্ষ বেতনসহ বিভিন্ন পাওনাদি না দেওয়ার ফলে শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি দাবা নিয়ে গত দু’মাস পূর্বে কাপ্তাই বড়ইছড়ি প্রধান সড়কে মানববন্ধন করে। এবং বিভিন্ন প্লেকার্ডে লেখা থাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাঁচান, মিল বাঁচান এবং মিলের সম্পত্তি বাঁচান। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে সেই মানববন্ধনে সর্বস্তরের লোকজন মিল বাঁচাও নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এবং সেই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাবেক পার্বত্যপ্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকার ।

তিনি বলেন, এ সুনামধন্য মিলটি একটি কালো সিন্ডিকেটের ছায়া পড়েছে। এবং মিলের অর্থ সংকট প্রচুর রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিসিআইসির মিটিং-এ এবিষয়ে কথা বলবে বলেও উল্লেখ করেন।

এদিকে শ্রমিকদের কয়েক দফা বিসি আইসির বিভিন্ন শাখায় বদলী করায় এবং মিলের উৎপাদন কখনও হয় আবার কখনও বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে মিল বন্ধের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে কাপ্তাই চিপিং এন্ড হ্যান্ডলিং প্লান্টে নদীতে কোটি, কোটি টাকার বাঁশ পানিতে নষ্ট হচ্ছে। রোদ্রে শুকিয়ে যাচ্ছে।

অনেক ঠিকারদার বলেন, মিল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের টাকা পরিশোধ না করার ফলে তারাও অতিকষ্টে মানবতার জীবন যাপন করছে। শ্রমিকদের কাজের টাকা পরিশোধ করতে না পাড়ায় অনেক ঠিকাদার পালিয়ে পালিয়ে থাকছে।

সকল কর্মচারীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি এ মিলকে অর্থ দেয় এবং কালো সিন্ডিকেট থেকে দূরে রাখে তাহলে মিল আবার ঘুরে দাঁড়াবে। মিলের উৎপাদন পূর্বের মত ফিরে পাবে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ অতি জরুরী বলেও উল্লেখ করেন।

এদিকে কাপ্তাই বাঁশকেন্দ্রে স্থায়ীসহ ও মাষ্টারুল শ্রমিক আছে মাত্র ৮জন। কাপ্তাই চিপাড় হাইজ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালেহীন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ  ১০/১২ বছর যাবত এ চিপারের সংস্কার কাজ হচ্ছেনা। পূর্বে এ শাখায় লোকবল ছিল ৩৬জন এবং বর্তমানে স্থায়ী, মাস্টারুল ও নিরাপত্তাসহ আছে মাত্র ১৭জন। মিলের প্রধান শাখায় মাল থাকায় এবং কাপ্তাই শাখায় সংস্কার কাজের জন্য উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার ফলে এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে পুনরায় বাঁশ চিপ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন।

Exit mobile version