অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম : অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী

pbt

আমান উদ্দীন মুজাহিদ

বাংলাদেশের প্রায় ১ দশমাংশ ভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নৈসর্গিক খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলা নিয়ে গঠিত এ অঞ্চলে বর্তমানে সংঘাত, সংঘর্ষ, বাঙ্গালী নিধন ও চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ক্ষতবিক্ষত এ অঞ্চলকে নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠছে। সম্প্রতি দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা নিয়ে এ মহলটির অতি উৎসাহ ও গোপন তৎপরতা লক্ষণীয়। উপজাতি থেকে আদিবাসি হওয়ার হাস্যকর দাবি সে ষড়যন্ত্রকে আরো বেশি স্পষ্ট করেছে সচেতন দেশবাসীর সামনে। নৃতত্ত্ববিদদের সকল গবেষণায় প্রমাণিত ও স্বীকৃত পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতিবৃন্দ আদিবাসী নয়। তারপরও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক হয়ে কাজ করা কিছু বামপন্থী নেতার বক্তব্য-বিবৃতি এ অঞ্চলকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও পার্বত্য বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী অধিকার বঞ্চিত প্রায় সর্বক্ষেত্রে। সন্তুলারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি ও বিদ্রোহী ইউপিডিএফ এর অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে প্রায় প্রতিদিনই নিরীহ লোকজন খুন হচ্ছে। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই উপজাতীয় সশস্ত্র বিদ্রোহীরা এ মরণ খেলায় মেতে ওঠেছে। বাঙ্গালী নিধন প্রশ্নে আবার তারা এক হয়ে কাজ করে। দেশের ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারছে না কেন তা বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর কাছে বিরাট এক প্রশ্ন। বিগত এপ্রিল মাসে রামগড়ের বড়পিলাতে অত্যন্ত নৃশংসভাবে ৩ জন বাঙ্গালীকে হত্যা করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। প্রায় ৬০টি ঘরবাড়ি আগুন জ্বালিয়ে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে। দুঃখজনক হচ্ছে কিছু মিডিয়া খবর প্রচার করে বাঙ্গালীরাই হামলা করেছে। অথচ সঠিক চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। উপজাতীয় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী তথাকথিত শান্তিবাহিনীর নামে এ যাবত প্রায় ৩০ হাজার নিরীহ বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে। কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজিতে প্রতিনিয়ত সেখানকার ব্যবসায়ীদের অতিষ্ঠ করে তুলছে। সচেতন মহল মনে করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে বিরাজমান সমস্যার সমাধান সম্ভব। অধিবাসীদের অর্ধেক বাঙ্গালী জনসাধারণ জীবনযাত্রাসহ সর্বক্ষেত্রে চরমভাবে পিছিয়ে আছে সরকারের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে।

বছরের পর বছর ভূমিবিরোধ জিইয়ে রেখে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ফায়দা লুটছে। বহির্বিশ্বে প্রচারণা চালানো হচ্ছে আমাদের ভূমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা নিজ দেশে পরবাসী। কথিত জুম্ম জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করছে ইত্যাদি। দেশের সরকারও সমস্যার গভীরে প্রবেশ না করে তাদের কথায় সায় দিচ্ছে, পরিণামে সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া কোনভাবেই সফল হতে পারে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীরা যে সব অধিকার থেকে বঞ্চিত তার কিয়দংশ এখানে তুলে ধরা হলো :

শিক্ষার অধিকার

মেডিকেল, বুয়েট, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন সরকারি পলিটেকনিক, প্যারামেডিকেলসহ সর্বত্র পাহাড়ী উপজাতীয়দের জন্য কোটা বরাদ্দ আছে। কোটার বিনিময়ে উপজাতীয় ছাত্র/ছাত্রীরা কম মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। অথচ একই এলাকার একই স্কুলে, কলেজে পড়া মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী বাঙ্গালী হওয়ার অপরাধে তারা কোটা সুবিধা পাচ্ছে না। দেশের হাজারো শিক্ষার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করে বাঙ্গালী ছাত্র/ছাত্রীদেরকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতি ও বাঙ্গালী জনসংখ্যার অনুপাত প্রায় সমান হলেও বর্তমানে এ বৈষম্যের কারণে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাঙ্গালীরা চরমভাবে পিছিয়ে পড়েছে।

নিম্নোক্ত পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ বহন করে।

সাল                   প্রতিষ্ঠান                         বাঙ্গালী                    উপজাতি

২০০০ থেকে ২০১০   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়               ০৯                         ১৩৭

                            ঢাকা মেডিকেলসহ

                        সরকারি মেডিকেল কলেজ     ৬                           ৯৪

                        সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ      ৪৬                         ৬৪২ প্রায়

                        এছাড়া বিভিন্ন বুয়েটসহ

                        অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ৭                           ১৬৮

সরকারি পলিটেকনিক কলেজ ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান, প্যারা-মেডিকেল কলেজ তো আছেই।

উচ্চ শিক্ষার এ বিশাল বৈষম্যের কারণ হচ্ছে প্রতি শিক্ষাবর্ষে উপজাতি শিক্ষার্থীরা দেশের সব সরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি বিভাগে ২ থেকে ৪ জন পর্যন্ত ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। সেখানে পার্বত্য বাঙ্গালীরা ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ব্যতিরেকে ভর্তি হতে পারছে না। ফলে প্রতি বছর এ সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়ছে এবং এ বিভাজন ক্রমশ অসম অবস্থান তৈরি করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সুযোগ এমনিতেই কম তার ওপর উপজাতীয় কোটার ফলে বাঙ্গালীদের প্রতি চরম বৈষম্য তাদের শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ করে তুলছে বলে শিক্ষাবিদরা মনে করেন। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মনে করেন, উপজাতীয় কোটার পরিবর্তে পার্বত্য কোটা চালু করলেই এ বৈষম্য ও বিভাজন কমে আসবে এবং বাঙ্গালী-পাহাড়ী সবাই সমানভাবে উপকৃত হবে। চাকমাদের শিক্ষার হার যেখানে শতকরা ৯০ এর ওপরে এবং তাদের চাকরির অধিকার যেখানে সংরক্ষিত সেখানে তাদেরকে অনগ্রসর বলার কোন যৌক্তিকতা আছে কী? বিপরীত পক্ষে পার্বত্য বাঙ্গালীদের মাঝে মাত্র শতকরা ১৫ থেকে ১৬ ভাগ শিক্ষিত আবার চাকরির সুযোগ নেই বললেই চলে সেখানে ঐ অঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী কী অগ্রসর?

চাকরির অধিকার

সরকারি চাকরিতে শতকরা ৫ ভাগ উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত এ সুবিধার কারণে উপজাতি সবাই চাকরি পাচ্ছে। বিপরীতপক্ষে পার্বত্য বাঙ্গালীদেরকে পুরো দেশের প্রতিযোগীর সাথে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেতে হচ্ছে। এ বৈষম্যের কারণে বাঙ্গালীরা দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে। সম্ভবত ১৯৮৪/৮৫ সাল থেকে বিসিএস এ ৫ শতাংশ কোটা উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তখন যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে তারা সশস্ত্র বিদ্রোহ পরিত্যাগ করে দেশের সরকারি চাকরিতে অংশ নেবে এবং অনগ্রসর উপজাতি হিসেবে এ সুবিধা ভোগ করবে। বিষয়টি একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় চাকমাদের জন্য প্রদত্ত এ সুবিধা সংবিধানের ২৯ (৩) উপধারা মতে কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বরং এই কোটা প্রথা (২৯)৩ উপধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।       

সংবিধানের ওই উপধারায় দেশের অনগ্রসর অংশের জন্য বিধান প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। অথচ উপজাতী কোটার সুযোগ পাচ্ছে এককভাবে চাকমা সম্প্রদায়। সারাদেশের শিক্ষার হার বিচার করলে সে অনুপাতে চাকমা সম্প্রদায় অনেক এগিয়ে। শতকরা প্রায় ৯০ শতাংশের উপরে বর্তমানে চকমাদের শিক্ষার হার উপরন্তু সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও তারা কোটা সুবিধা ভোগ করার ফলে সামগ্রিকভাবে চাকমা সম্প্রদায়কে কোনোভাবেই অনগ্রসর বলার সুযোগ নেই। দেশপ্রেমিক জনগণ মনে করে উপজাতী বা চাকমা কোটার পরিবর্তে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পার্বত্য কোটা চালু করা প্রয়োজন, তবেই এ বিরাট বৈষম্য ও বিভাজন কমে আসবে।

রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। এক দেশে দু’ধরনের আইন বিরাজমান। জেলা পরিষদ, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে শুধু উপজাতীরাই নিয়োগ পাবেন। বাঙ্গালিদের প্রার্থী হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। স্থায়ী বাসিন্দা সনদ নিতে হয় স্থানীয় উপজাতী হেডম্যানদের কাছ থেকে। স্থায়ী বাসিন্দার সনদ ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অভিযোগ রয়েছে উপজাতী অধ্যুষিত অঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীদেরকে কৌশলে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এবং তাদেরকে বহিরাগত বলে মানসিকভাবে দুর্বল করে রাখা হচ্ছে। বসবাসরত জনসংখ্যার অর্ধেক বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখার রাষ্ট্রীয় কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। অথচ উপজাতীয়দের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতির জন্য বহু সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং কোটি কোটি টাকার বাজেট রয়েছে। ঐ অঞ্চলে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের নিজ নিজ সংস্কৃতি বিকাশের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন। যাতে করে সবাই পারস্পরিক সংস্কৃতি বিকাশের মাধ্যমে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে এবং ঐ ভূখন্ডের জন্য সবার সমান আন্তরিক দেশপ্রেম জাগরিত হয়।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার

আশ্চর্য হলেও সত্য একই ভূখন্ডে দু’ধরনের আইন। দু’লাখ টাকার মধ্যে প্রকল্পের ঠিকাদার হবে শুধুমাত্র উপজাতীয়রা। সেখানে বাঙ্গালিদের চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। দু’লাখ টাকার ঊর্ধ্বের প্রকল্প শতকরা ১০ ভাগ উপজাতীয় ঠিকাদারদের জন্য রিজার্ভ। বাকি ৯০ ভাগ ওপেন টেন্ডারে বাঙ্গালি উপজাতী সবাই অংশ গ্রহণ করতে পারবে। এ অভিযোগ সর্বজনবিদিত যে উপজাতী ঠিকাদারদের দাপটে বাঙ্গালিরা অসহায়। সরকারি ঋণ উপজাতীয়দের জন্য শতকরা ৫ ভাগ আর বাঙ্গালিদের জন্য ১৬ ভাগ বর্ধিত হারে সুদ দিতে হয়। ঋণ মওকুফের ক্ষেত্রে উপজাতীয়রা বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করে আসছে যা বাঙ্গালিদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এ চরম দ্বৈতনীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালিরা আজ চরমভাবে অর্থনৈতিকভাবে অবহেলিত। বিপরীত পক্ষে রাষ্ট্র কর্তৃক ভ্রান্ত নীতির কারণে উপজাতীয়রা অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর অগ্রসর এবং রীতিমত মোড়ল বনে গেছে। উপজাতীয় নেতাদের অর্থনৈতিক দাপটের কারণে বাঙ্গালিরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে নানান অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে। বিশিষ্টজনরা মনে করেন অর্থনৈতিক এ বৈষম্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ বৈষম্যের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব জনগোষ্ঠীর সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি অংশ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারছে না।

সামাজিকভাবে বাঙ্গালিরা অবহেলিত মূলত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে উন্নয়নের মূলধারায় আনতে হলে ঐ অঞ্চলের অর্ধেক বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ভূমির অধিকার

ভূমি বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে। উপজাতীয় নেতারা কৌশলে এ বিরোধকে জিইয়ে রাখছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। সরকারের গঠিত ভূমি কমিশনকে রীতিমত পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসী সন্তু লারমা। শত অনুনয় বিনয় করেও তাদেরকে কোনো মিটিংয়ে হাজির করাতে পারেনি। সন্তুলারমার দাবির কাছে নতি স্বীকার করে মাননীয় ভূমি মন্ত্রীকে যেতে হয়েছে খাগড়াছড়ি। ভূমি কমিশন চেয়ারম্যান বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারছেন সমস্যার মূল নিয়ামক শক্তি হিসেবে কারা কাজ করছেন এবং কেনই বা তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকরা মনে করেন প্রকৃত ভূমির মালিককে অবশ্যই তার জমি ফেরত দিতে হবে। পাহাড়ী বাঙ্গালি যেই হোক। বাঙ্গালিরা যেমন কিছু ক্ষেত্রে উপজাতীয়দের জমি দখল করে রেখেছে আবার উপজাতীয় কর্তৃক বাঙ্গালি জমি দখলের ঘটনাও ঘটেছে। দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে বিরাজমান পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাত, সংঘর্ষ, হত্যাযজ্ঞ এবং চরমভাবে অবহেলিত বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আজো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর সম্পাদিত তথাকথিত পার্বত্য শান্তি চুক্তি সমস্যাকে জিইয়ে রাখার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়েছে। দেশপ্রেমিক জনসাধারণ শান্তিপ্রিয় উপজাতি জনগোষ্ঠীর বিরোধী নয়। তারা চায় সমান সুযোগ-সুবিধা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে ঐ অঞ্চলে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের লোকজন শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে। শান্তিপূর্ণভাবে সাধারণ উপজাতীয় জনসাধারণও বসবাস করতে চায়। কিন্তু উপজাতীয়দের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে দীর্ঘকাল পর্যন্ত সন্ত্রাসী সন্তুলারমা যে অপতৎপরতা ও দেশদ্রোহী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে তা শান্তিপ্রিয় সাধারণ উপজাতীয়রাও সমর্থন করে না। বিচক্ষণ মহল মনে করেন আজ সময় এসেছে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঠিক দায়িত্ব পালন করার। তারা মনে করেন মিডিয়া যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারে তাহলেই তারা বুঝতে পারবে নিজ ভূখন্ডে বসবাসরত বাঙ্গালি জনগোষ্ঠী কত অসহায় ও অধিকার বঞ্চিত অবহেলিত জনসমষ্টি হিসেবে দিনাতিপাত করছে। দেশপ্রেমিক বিবেকবান সাংবাদিক বন্ধুদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যাসমূহ চিহ্নিত  করে সঠিক সংবাদ ও ঘটনা প্রকাশের উদাত্ত আহবান আজ এ অঞ্চলে বসবাসরত সকল মানুষের। আমরা মনে করি বিবেকের দায়বোধ থেকে সাংবাদিক বন্ধুগণ তাদের মহান দায়িত্ব পালন করে যাবেন এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

লেখক : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন