কক্সবাজার প্রতিনিধি:
অনেকে বিভিন্ন রোগের সামান্য লক্ষণের উপর নির্ভর করে নিজে থেকেই ধারণা করে বসেন তিনি কি রোগে ভুগছেন। আর রোগী কোন ভাবেই মানতে চায়না তার ওই রোগ হয়নি। বুক ব্যাথা করলে মনে করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে। তলপেট ব্যাথা করলে মনে করে কিডনিতে সমস্যা।
ওই ভ্রান্ত ধারণার উপর নির্ভর করে অনেকে চিকিৎসকের পরার্মশও মানতে রাজি নন। আর একের পর এক চিকিৎসক বদলায়। এটি এক ধরনের মানসিক রোগ বলে জানান, মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া আরও একটি বিষয় দেখা যায়, কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব অথবা যারা সেবা দিচ্ছে তারাই ওই রোগীকে অসুস্থ করে তুলে। রোগীর সামনেই হা-হুতাস আর কান্না করে রোগীর মনোবল নষ্ট করে দেয়।
বলতে দেখা যায়, ‘রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ বাঁচে কি মরে সন্দেহ আছে’। রোগীর সামনে এসব কথা বললে রোগী এমনিতেই ‘আধমরা’ হয়ে যায়। এমনটাই বলছেন চিকিৎসক ও মনোরোগ বিশেজ্ঞরা।
তারা বলছেন, যেখানে রোগীকে মানসিকভাবে শক্তি যোগানো উচিত সেখানে রোগীকে মানসিকভাবে দূর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। এতে রোগীর অবস্থার অবনতি হয়।
পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়ার শেকান্দর আলী জানান, তার বুকে জ্বালা করায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তার ধারণা তিনি হৃদরোগে ভুগছেন। তিনি একই সমস্যা নিয়ে নিজ এলাকা ও চট্টগ্রামে চিকিৎসা করেন। তিনি ওখানের চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কারণ তার ধারণা তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালেও নানা পরিক্ষার করে চিকিৎসক বলেন, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত নন। তার গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা বেশি।
শহরের বাহারছড়ার হোসনে আরা নামে এক নারী জানান, গত কয়েক বছর আগে তার ডেঙ্গু হয়েছিল। আর তাকে যারা দেখতে যেত তাদের অনেকেই বলত তিনি আর বাঁচবেন না। এতে তার খুবই ভয় হত। এমনকি পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে বিদায়ও নিয়েছিল। পরে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, কখনও নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবেনা কি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যে রোগের লক্ষণ’ই হোক না কেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা সনাক্ত করতে হবে। আর রোগীকে কখনও ভয় দেখাতে নেই। কারণ রোগীকে উৎসাহ দেওয়া ও সাহস যোগানো চিকিৎসার একটি অংশ।
এ ব্যাপারে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, অনেকে নিজস্ব ধারণা থেকে বের হতে চায়না নিজের অজান্তে। এটি এক ধরনের মানসিক রোগ। তাই কি রোগ হয়েছে, তা নিজের ধারণার উপর নির্ভর না করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকের শরাপন্ন হওয়া উচিত।
রোগীর মনোবল ভেঙ্গে ফেলার ব্যাপারে তিনি জানান, শুধু রোগী বলে কথা নয়, কারো মনোবল ভেঙ্গে ফেললে ওই ব্যক্তি অসহায় বোধ করে। এ ক্ষেত্রে রোগীদের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা উচিত। তার সামনে এমন কিছু না বলা যাতে সাহস ভেঙ্গে যায়।