পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঘাইছড়ি উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত একটি বিপুল অস্ত্রের চালান দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাহাড়ের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন—ইউপিডিএফ ও জেএসএস।
স্থানীয় সূত্র ও নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী ভারতের মিজোরাম সীমান্তে অস্ত্রের একটি বড় চালান ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে। এ চালানটি যে কোনো সময় বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে প্রবেশ করানো হতে পারে।
বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, অস্ত্রের চালানটিতে রয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি ৭.৬২ মিমি বোরের গুলি, পাশাপাশি অন্তত ২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে রয়েছে একে-৪৭, এসএমজি, চায়না রাইফেল এবং এম-১৬ টাইপের আধুনিক অস্ত্র।
সূত্র জানায়, পাহাড়ে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা বাড়াতে ইউপিডিএফ সংগঠনটি এ চালান সংগ্রহ করেছে। ইতোমধ্যে ইউপিডিএফ’র অন্তত ১৩৫ জনের একটি সশস্ত্র দল অস্ত্র বুঝে নিতে ভারতীয় সীমান্তের ওপারে অবস্থান করছে। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউপিডিএফ-এর সিনিয়র কোম্পানি কমান্ডার রঞ্জন মনি চাকমা (আদি) এবং সহকারী কোম্পানি কমান্ডার ডা. প্রীতি।
এই দলটি বর্তমানে মিজোরামের ন-হাবা বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। অপরদিকে, বাংলাদেশের ভেতরে তারা অবস্থান নিয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের গন্ডাছড়া বিজিবি বিওপি’র আওতাধীন ‘পিত্তিছড়া’ নামক স্থানে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, ইউপিডিএফ সদস্যরা বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে চালসহ বিভিন্ন রসদ সংগ্রহ করে ওই এলাকায় মজুদ করেছে।
এদিকে, অস্ত্রের চালান সম্পর্কে খবর পাওয়ার পরপরই জেএসএসও চালানটি লুটের উদ্দেশ্যে তৎপর হয়ে ওঠে। তাদের শতাধিক সদস্যের একটি সশস্ত্র দল বর্তমানে শিয়ালদহ, পিত্তিছড়া এলাকায় অবস্থান করছে। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন মনিময় চাকমা, সায়মন এবং বরুণ চাকমা।
গত এক সপ্তাহে অন্তত চারবার বাঘাইছড়ি উপজেলার আমছড়ি, গন্ডাছড়া ও উদলছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ ও জেএসএস-এর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
সবশেষ, গত রোববার সকালে উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে ইউপিডিএফ-এর অন্তত চার সদস্য গুলিবিদ্ধ হন এবং দুইজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হলেও, সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো তা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, “পাহাড়ে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আমরা সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছি। পরিস্থিতি আমাদের কড়া নজরদারির আওতায় রয়েছে। কেউ যদি পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর অপচেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের একটি অস্ত্রের চালান পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করলে অঞ্চলটিতে আবারও সংঘাত, সহিংসতা ও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়বে।
নিরাপত্তা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ইউপিডিএফ-এর অন্যতম বড় ক্যাম্প রয়েছে ভুয়াছড়িতে। এছাড়া, দুরদুরি ছড়া, থালকুম্বো, লক্ষ্মীছড়িতে আরও অন্তত পাঁচটি সশস্ত্র ক্যাম্প রয়েছে সংগঠনটির। শীলছড়ায় রয়েছে তাদের অফিসারদের ব্যারাক এবং অস্ত্র-গোলাবারুদের গোপন ভাণ্ডার। এ এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
অবস্থা বিবেচনায়, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীকে কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে না পারলে পাহাড়ে আবারও বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্লেষক মহল।