নিজস্ব প্রতিবেদক:
বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা বা মার্মা ভাষায় ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েহ’ শুরু হয়েছে।
চুলামণি দেবতার উদ্দেশ্যে আকাশে ফানুস ওড়ানো, রথযাত্রা, জলে বসবাসকারী অরহত উপগুপ্তর উদ্দেশে শঙ্খ নদীতে রথ ভাসানোসহ দুই দিনব্যাপী ধর্মীয় উৎসবের যৌথভাবে আয়োজন করেছে বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এবং উৎসব উদ্যাপন পরিষদ।
রবিবার সন্ধ্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি ফানুস ওড়ানো এবং বুদ্ধ মূর্তি বহনকারী রথে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন।
এ সময় বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, পৌর মেয়র ইসলাম বেবীসহ মার্মা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যায় ময়ুর আকৃতি রথে প্রদীপ প্রজ্বালনের উদ্বোধন শেষে বান্দরবান জেলা সদরের পুরনো বোমাং রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ থেকে রথ টেনে দুটি বৌদ্ধ বিহার এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পরিভ্রমণ শেষে একই স্থানে এনে রথ রাখা হয়। পরের দিন সোমবার সন্ধ্যায় রথ টেনে আবারও দুটি বৌদ্ধ বিহার এবং জনপদ অতিক্রম করে রাতে শঙ্খ নদীর উজানিপাড়া ঘাটে নিয়ে এসে উপগুপ্তের উদ্দেশ্যে ময়ূর আকৃতির রথ রাতে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ী পল্লী ও বৌদ্ধ উপসনালয়গুলোকে নানা রঙ্গে সাজানো হয়েছে। আতশবাজি, রং-বেরংয়ের বর্ণিল ফানুস উত্তোলনের উৎসবে মেতে উঠে তরুন তরুনীসহ নানা বয়সী নারী পুরুষরা। ছাড়াও পুরাতন রাজবাড়ী মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঘরে ঘরে পিঠা তৈরি উৎসব ও বৌদ্ধ মন্দিরে ধর্ম দেশনা ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়েছে।
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হল মারমা তরুণ-তরুণীরা গান গেয়ে দল বেঁধে রথ টানা। রঙ্গিন কাগজ, বাঁশ, বেত আর কাঠ দিয়ে তৈরি ময়ূরপঙ্খি রথ এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে টেনে নিয়ে যাবেন মারমা তরুণ-তরুণীরা। রথের মধ্যে থাকা বৌদ্ধ মূর্তিকে এ সময় মোববাতি আগরবাতি দিয়ে পূজা দেওয়া হয়। মুক্ত হস্তে দান করা হয় টাকা পয়সা। একদিকে রথ টানা আর অন্যদিকে চলে ফানুস বাতি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। শত শত ফানুস বাতিতে ছেয়ে যায় রাতের আকাশ। পাড়ায় পাড়ায় চলে পিঠা পুলি তৈরির আয়োজন। মারমাদের এই উৎসব দেখতে দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটক ভিড় জমিয়েছেন বান্দরবান শহরে।
উৎসব পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুইটিং উয়ে জানান, উৎসবকে সার্বজনীন করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ধর্মীয় নেতারা জানান, তিন মাস বর্ষাবাস (উপোস) থাকার পর মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়ে পোয়েহ উৎসব পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। প্রচলিত আছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তার মাথার একমুঠো চুল কেটে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই আশ্বিনী পূর্ণিমার এই তিথিতে আকাশে ওড়ানো হয় ফানুস বাতি। গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে মারমা সম্প্রদায় ফানুস বাতি আকাশে উড়িয়ে দেয়।
এই উৎসবকে ঘিরে বান্দরবান জেলা শহর ও উপজেলা গুলোতে সর্বাত্মক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়।