আগামীকাল ভাসানচর যাচ্ছে আরও দেড় হাজার রোহিঙ্গা

fec-image

আগামীকাল সপ্তম দফায় কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে যাচ্ছে দেড় হাজার রোহিঙ্গা।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিকাল থেকে তাদেরকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো করা হচ্ছে। বুধবার (২৪ নভেম্বর) সকালে বাস ও ট্রাকে চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। সেখান থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাহাজে ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে নেওয়া হবে রোহিঙ্গাদের।

এর আগে ১ ও ২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফায় (দুই অংশে) চার হাজার ৩৭২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে যায়। এবার ১৮’শ থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের টার্গেট সরকারের। রোহিঙ্গাদের নিয়ে সম্পৃক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন (আরআরসি) কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কক্সবাজার-৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন জানান, উখিয়াসহ বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যেতে স্বেচ্ছায় রাজি হওয়া দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা অনুযায়ী স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।তাদের ক্যাম্প থেকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নেওয়ার কাজ চলছে। সেখানে কার্যক্রম শেষে বুধবার সকালে রওনা দেবে চট্টগ্রামে। রাতে তারা সেখানে থাকবে। বুধবার সকালে ভাসানচর নিয়ে যাওয়া হবে।

নোয়াখালীর ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ জন, ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় এক হাজার ৮০৪ জন, চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফার তিন হাজার ২৪২ জন, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফায় তিন হাজার ১৮ জন এবং পঞ্চম দফায় ৩ ও ৪ মার্চ চার হাজার ২১ জন, ষষ্ঠ দফায় ১ ও ২ এপ্রিল চার হাজার ৩৭২ জন রোহিঙ্গা রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তর করা হয়। গত বছরের মে মাসে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।

উখিয়া বালুখালী ক্যাম্প ইনচার্জ (সহকারী সচিব) মো. আরাফাতুল আলম জানান, ওই ক্যাম্পের চার পরিবারের ১১ জন সদস্য ভাসানচরে যেতে উখিয়া ডিগ্রি কলেজে অবস্থান করছে।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) উখিয়ার নেত্রী জামালিদা বেগম জানান, তার শিবির থেকে পাঁচ পরিবারের ২৮ জনের একটি রোহিঙ্গা দল স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। তাদেরকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজে রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুতুপালং ক্যাম্পে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে এআরএসপিএইচ-এর চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়। এরপর ২২ অক্টোবর রাতে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ছয় জন নিহতের ঘটনায় ক্যাম্পের বাসিন্দারা আতঙ্কে আছে। তাই বেশিরভাগ রোহিঙ্গা ভাসানচরে চলে যাচ্ছে।

ভাসানচরের আরআরআরসি প্রতিনিধি ও ক্যাম্প ইনচার্জ (সহকারী সচিব) নওশের ইবনে হালিম জানান, বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের দলটি ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আমরাও ভাসানচরে সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান মো. রফিক জানান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ও সিক্স মার্ডারের পর ক্যাম্পের অনেকের আতঙ্কে দিন কাটছিল। তাই এবার রোহিঙ্গারা ভয়ে ভাসানচরে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। পাশপাশি ভাসানচরের কার্যক্রমের সঙ্গে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় তাদের মাঝে ভাসানচরে যেতে উৎসাহ কাজ করছে। ক্যাম্পে থেকে ইতোমধ্য কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার ক্যাম্প ত্যাগ করেছে।

উখিয়া ক্যাম্পে নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত কক্সবাজারের আর্মড পুলিশ-১৪ ব্যাটালিয়নের পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমুল হক জানান, এবার ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ১৮শথ থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের টার্গেট রয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগের ও তখনকার মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বসবাস করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন