parbattanews

আজ ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী দিবস

yesblog_1303114129_1-fv
 
আশফাক আজিজ:
আজ ১৮ই এপ্রিল ২০১৪ । ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ি দিবস আজ । ১৩ বছর আগে ২০০১ সালের আজকের এই দিনে কুড়িগ্রামের রৌমারীর বড়াইবাড়িতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বড়াইবাড়ি ছিটমহলের ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নিমর্মভাবে । বড়াইবাড়ি ছিটমহল ও বিজিবি ক্যাম্প দখলের সে দিনের বিএসএফ’র অপচেষ্টা প্রতিহত করে বিজিবি জোয়ান এবং সীমান্তবাসীরা । ঐ দিন রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী গোপনে কাটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে । ধানক্ষেত দিয়ে রাতের অন্ধকারে তারা বড়াইবাড়ি ক্যাম্প আক্রমণের উদ্দেশ্য এগুতে থাকে । এসময় এক বাংলাদেশি যুবক তাদের দেখতে পায় এবং তত্‍ক্ষনাত বিডিআর ক্যাম্পে এসে বিএসএফের অনুপ্রবেশের কথা জানিয়ে দেয় । খবর পেয়ে ক্যাম্প কমান্ডার বিডিআর জোয়ানদের প্রস্তুত হতে বলেন । এদিকে বিএসএফ বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্পের কাছাকাছি এসে বৃষ্টির মত ফায়ার করতে শুরু করে । আধাঘন্টা ফায়ারের পর তারা বিডিআরের পক্ষ থেকে কোন জবাব না পেয়ে ফায়ার থামায়, তারা ভেবেছিল বিডিআর জোয়ানেরা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে এই ভেবে তারা ক্যাম্পের দিকে পা বাড়ায় আর সঙ্খে সঙ্খে বিডিআর জোয়ানরা ফায়ার করা শুরু করে । বিডিআরের চারটি চাইনিজ লং রেঞ্জ ম্যাশিনগানের অবিরাম গুলিবর্ষণে হতবিহবল হয়ে পড়ে বিএসএফ এবং ১৬ বিএসএফ সদস্য নিহত হয় । বিএসএফ এর গুলিতে শহীদ হয় তত্‍কালিন বিডিআরের নায়েক সুবেদার ওয়াহিদ মিয়া, সিপাহী মাসফুজুর রহমান এবং সিপাহী আবদুল কাদের । এছাড়া আহত হয় ৬ সাধারণ মানুষ ।

পিছু হটে গিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে গুলীবর্ষণ করতে থাকে বিএসএফ এবং পরবর্তী ৪২ ঘন্টার যুদ্ধে বিএসএফের শতাধিক সদস্য নিহত হয় । বিএসএফ’র মর্টার শেল ও আগুনে বড়াইবাড়ি ছিটমহল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় । ২০০১ সালের ওই ঘটনার পর থেকে বড়াইবাড়ি সীমান্তের মানুষ বড়াইবাড়ি দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে । উদযাপন করছি আমি নিজেও । বিজিবি জোয়ানরাও সীমান্তবাসীর সঙ্গে নানা কর্মসূচি পালন করে । তত্‍কালিন বিডিআর এবং বিএসএফ এর মাঝে ৪২ ঘন্টার ওই যুদ্ধে বড়াইবাড়ি ছিটমহলের ১৭৯ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয় । বিডিআরের সঙ্গে সীমান্তবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় । তত্‍কালিন বিডিআরের ডিজি এ.এল. এম. ফজলুর রহমান পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর ক্যাম্প পরিদর্শন করেন । ১৬ বিএসএফের লাশ ঢাকায় আনা হয় । শহীদ ৩ বিডিআর সদস্যদের লাশ পূর্ণ মর্যাদায় দাফন করা হয় ।

 
আমার দৃষ্টিতে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি বিজিবি(সাবেক বিডিআর) এর জন্য একটি গৌরবজ্জল দিন । কিন্তু দুঃখের বিষয় বিজিবির সেই গৌরব দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে । তবে সেইদিনের অপেক্ষায় আছি যে দিন বিজিবি আবার তার পূর্ব গৌরব ফিরে পাবে এবং সীমান্তে বিএসএফের আক্রমণের দাঁত ভাঙা জবাব দিবে ।
Exit mobile version